আতা
আতা Annona squamosa | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | উদ্ভিদ |
বিভাগ: | সপুষ্পক উদ্ভিদ |
শ্রেণী: | Magnoliids |
বর্গ: | Magnoliales |
পরিবার: | Annonaceae |
গণ: | Annona |
প্রজাতি: | A. squamosa |
দ্বিপদী নাম | |
Annona squamosa L.[১] |
আতা হল অ্যানোনা (Annona) গণের এক ধরনের যৌগিক ফল। এটি শরিফা, মেওয়া বা মাদার নামেও পরিচিত। এই ফলের ভিতরে থাকে ছোট ছোট কোষ। প্রতিটি কোষের ভেতরে থাকে একটি করে বীজ, বীজকে ঘিরে থাকা নরম ও রসালো অংশই খেতে হয়। পাকা ফলের বীজ কালো এবং কাঁচা ফলের বীজ সাদা। বীজ বিষাক্ত। এটি গুচ্ছিত ফল অর্থাৎ একটি মাত্র পুষ্পের মুক্ত গর্ভাশয়গুলো হতে একগুচ্ছ ফল উৎপন্ন হয়।[২]
অ্যানোনা গণের অন্যান্য প্রজাতি যেমন নোনা (A. reticulata) ও লক্ষণ ফলের (A. muricata) চেয়ে এই প্রজাতি বেশি জনপ্রিয়। ইংরেজিতে একে "সুগার অ্যাপল" (sugar-apple), "সুগার পাইন্যাপেল" (sugar-pineapple) বা "সুইটসপ" (sweetsop) বলা হয়। হিন্দিসহ বেশকিছু ভারতীয় ভাষায়ও এটি "শরিফা" বা "সরীফা" নামেই পরিচিত যদিও হিন্দিতে এর আরেক নাম "সীতাফল"।
অ্যানোনা গণের প্রজাতিসমূহ
বর্তমানে সাতটি এনোনা (Annona) গণভুক্ত প্রজাতি এবং একটি সংকর জাত পৃথিবীজুড়ে বাড়ির আশেপাশে বা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হয়। সবগুলোই সুস্বাদু ফল। [৩]
জনপ্রিয় প্রজাতিগুলো হচ্ছে—
- Annona squamosa — এটিই বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি জন্মে। স্বাদেও এটিই সেরা। সুমিষ্ট এই ফলটি "আতা" নামে বেশিরভাগ স্থানে পরিচিত। তবে কোথাও একে "মেওয়া" এবং কোথাও একে "শরিফা" বলা হয়। এর চামড়ায় গুটি গুটি চোখ আছে।
- Annona reticulata — এর চামড়া মসৃণ, লালচে রঙ, স্বাদে কিছুটা নোনতা। "নোনাফল" নামে বেশি পরিচিত; তবে কোথাও কোথাও এটিকেই "আতা" বলা হয়। হিন্দিসহ বেশকিছু ভারতীয় ভাষায় একে "রামফল" বলা হয়।
- Annona senegalensis — এরও চামড়া মসৃণ, হলদেটে রঙ। তাই "আফ্রিকান নোনা" নামে ডাকা হয়। ইংরেজিতে একে "আফ্রিকান কাস্টার্ড অ্যাপল" (African custard-apple) বলা হয়।[৪]
- Annona muricata — এরও চামড়া প্রায় মসৃণ, সবুজ রঙ, স্বাদে টক। এটি "লক্ষ্মণ ফল" বা "টক আতা" নামে পরিচিত। ভারতের অনেক স্থানে একে আবার "হনুমান ফল" ও "শুল-রামফল" [ইংরেজিতে "প্রিক্লি কাস্টার্ড অ্যাপল" (prickly custard-apple)] বলা হয়ে থাকে।
- Annona cherimola — এটি বাংলাদেশে কমই জন্মে। এর চামড়াও অনেকটা মসৃণ। একে "হনুমান ফল" বলা হয়।
এছাড়া ‘থাই লেসার্ড’ এবং ‘কাম্পং মভ’ (Thai-Lessard, Kampong-Mauve) নামে এর দুটি প্রকরণ (variety) দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া যায়। [৫]
আতা গাছ
আতার আদিবাস ভারত। বাংলাদেশ ও ভারতে এটি বসতবাড়ীর আঙিনায় এবং বনে-জঙ্গলে জন্মে থাকে। তবে থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর বাণিজ্যিক চাষাবাদ হয়ে থাকে। আতা গাছ বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। গাছের আকার খুব বড় নয় ; উচ্চতায় ৩ থেকে ৫ মিটার। শীতকালে এর পাতা ঝরে যায় এবং বসন্তকালে নতুন পাতা গজায়, ফুল ধরে। পাতার আকৃতি বল্লমের মতো, অগ্রভাগ সরু। এর ফুল দেখতে কাঁঠালি চাঁপার মতো যার রঙ হালকা সবুজ থেকে সবুজাভ হলুদ হয়ে থাকে। কাঁচা ফল খাওয়া যায় না। বেলে দো-আঁশ মাটিতে আতা গাছ ভাল জন্মে [২]। বীজ থেকে এর চারা করা হয়। এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে ফুল ধরে এবং ৪/৫ মাসের মধ্যে আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ফল পেকে যায়। আতাফল হৃৎপিণ্ড আকৃতির হয়ে থাকে। এতে প্রচুর পরিমাণে আমিষ ও শর্করা জাতীয় খাদ্যোপদান রয়েছে। পাকা আতার শাঁস মিষ্টি হয়ে থাকে। খাওয়ার সময় জিভে চিনির মতো মিহি দানা দানা লাগে। এর কিছু ভেষজ গুণ রয়েছে। যেমন পাকা আতার শাঁস বলকারক, বাত-পিত্তনাশক ও বমনরোধক।[৬]
পাকা ফল সুমিষ্ট হওয়ার কারণে অনেক সময়ই পোকার সংক্রমণ হয়, সাদা রঙের পোকা দ্বারা আক্রান্ত হয় ফল।
উপকারিতা
এর খাদ্যআঁশ হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।
ঔষধি গুণ
অপুষ্টিজনিত সমস্যায় আতাফলের রস বেশ উপকারী।
ছবি গ্যালারি
-
বাংলাদেশের আতা ফল, A. squamosa
-
কাঁচা আতা, পাকা আতা ও এর ভেতরের অংশ। A. squamosa
-
আতাফল পাকলে ফেটে যায়। A. squamosa
-
বাংলাদেশে প্রাপ্ত নোনা ফল
-
গাছসহ নোনা ফল, A. reticulata
-
নোনা ফল, A. reticulata
-
নোনা গাছ। A. reticulata
-
নোনার ভেতরের অংশ। A. reticulata
-
পাতাসহ আফ্রিকান নোনা ফল। A. senegalensis
-
আফ্রিকান নোনার ভেতরের অংশ। A. senegalensis
-
লক্ষ্মন ফল, A. muricata
-
পাকা হনুমান ফল, A. cherimola
-
কাঁচা হনুমান ফল, A. cherimola
-
হনুমান ফলের ভেতরের অংশ। A. cherimola
-
পাতাসহ হনুমান ফল। A. cherimola
-
হনুমান ফল, A. cherimola
তথ্যসূত্র
- ↑ A. senegalensis was originally described and published in Synopsis Plantarum 2(1): 95. 1806.
- ↑ ক খ Flora of North America। "1. Annona Linnaeus, Sp. Pl. 1: 536. 1753; Gen. Pl. ed. 5, 241, 1754"। 3। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৪-২০।
- ↑ University of Southampton (২০০২)। "Factsheet No. 5. Annona" (পিডিএফ)। Fruits for the Future। Department for International Development, International Centre for Underutilised Crops। ২০১১-০৭-২০ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৪-২০। অজানা প্যারামিটার
|month=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ National Research Council (২০০৮-০১-২৫)। "Custard Apples"। Lost Crops of Africa: Volume III: Fruits। Lost Crops of Africa। 3। National Academies Press। আইএসবিএন 978-0-309-10596-5।
- ↑ http://toptropicals.com/catalog/uid/annona_squamosa.htm
- ↑ মৃত্যুঞ্জয় রায়: বাংলার বিচিত্র ফল। দিব্য প্রকাশ,২০০৭, ঢাকা। আইএসবিএন ৯৮৪-৪৮৩-২৬৬-৭ পৃ: ৯৪।