আত্মরক্ষার অধিকার
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/3/34/Bundesarchiv_Bild_102-11988%2C_Verbrecherabwehr_mit_Jiu-Jitsu.jpg/220px-Bundesarchiv_Bild_102-11988%2C_Verbrecherabwehr_mit_Jiu-Jitsu.jpg)
আত্মরক্ষার অধিকার (ইংরেজি: Right of Private Defence) আত্মরক্ষা বা ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার প্রত্যেকের জন্মগত অধিকার। একজন ব্যক্তি তার শরীর ও সম্পদের নিরাপত্তার অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে কোনো কাজ করলে তা আত্মরক্ষা বা ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অন্তর্ভুক্ত। এ কাজ করতে গিয়ে কারো কোনো ক্ষতি হলে আইনের চোখে অপরাধ না। আইনানুযায়ী ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা অধিকার প্রয়োগকালে কোনো কাজ করা হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না।
ভারতীয় দণ্ড বিধি / বাংলাদেশ দন্ডবিধি, উভয় দণ্ডবিধি ১৮৬০ এ 'সাধারণ ব্যতিক্রম' (ইং: General Exception) পরিচ্ছেদে (৯৬-১০৬ নং ধারা) বর্ণিত বিশেষ ব্যক্তি অধিকার যা দ্বারা কেউ নিজের বা অপরের শরীরের আঘাত, অনিষ্ট, বা অপরাধজনক অনধিকার প্রবেশ প্রতিরোধে অথবা নিজের বা অপরের সম্পত্তি রক্ষার্থে বল প্রয়োগ করতে পারে। এই অধিকার প্রয়োগে অপরাধীর কোনো ক্ষতি হলে ৯৯ নং ধারা ব্যতিক্রম সাপেক্ষ তা আইনের চোখে অপরাধ বলে বিবেচিত হয় না। এখানে লক্ষ্যণীয় যে, ক্ষতিসাধনকারী কাজটি একটি অপরাধ হতে হবে। আইনের দৃষ্টিতে যদি অপরাধ না হয় তবে এ ধারায় অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না। [১][২][৩]
বিবরণ
আত্মরক্ষার অধিকার মূলত এই বিষয়টিকে প্রতিষ্ঠা দেয় যে, আত্মরক্ষা করার নিমিত্ত কোনো কাজই অপরাধ নয়। (৯৬ নং ধারা)।[২] যে কোনো ব্যক্তি নিজের বা অপরের স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তিকে চুরি, দস্যুতা, অনিষ্টসাধন বা অপরাধজনক অনধিকার প্রবেশের অপরাধ বা ঐ সমস্ত অপরাধের চেষ্টা থেকে আত্মরক্ষা করতে পারবে। দণ্ডবিধিতে বর্ণিত এসব অপরাধের হাত থেকে জীবন ও সম্পদ রক্ষার অধিকারই আত্মরক্ষা বা ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার।
উদাহরণস্বরূপ, যেমন কোনো অপ্রকৃতস্ত ব্যক্তি যদি কাউকে লাঠি দিয়ে মারতে আসে। পাগল বলে তার এই কাজটি (৮৪ ধারায়) আইনে অপরাধ বলে বিবেচিত হবে না ঠিকই, কিন্তু সেই পথচারীটিও পাগলের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে তার ক্ষতিসাধন করতে পারবে। এক্ষেত্রে পথচারীর কাজটিও কোনো অপরাধ বলে বিবেচিত হবে না। ৯৯ ধারায় ব্যক্তিগত প্রতিকারের অধিকারের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো পাবলিক সার্ভেন্ট বা সরকারি কর্মচারী তার দপ্তরের ক্ষমতা বলে কোন কাজ সদ্ভাবে করেন বা করার উদ্যোগ নেন এবং সেই কাজের ফলে যদি কারোর যথাযথ মৃত্যু বা গুরুতর আঘাত পাবার আশঙ্কা না জন্মায় তবে ঐ কাজের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না – যদিও কাজটির মধ্যে আইনের সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকেও থাকে’।[৩]
আবার পদাধিকারবলে কোনো সরকারি কর্মচারী সৎ বিশ্বাসে আইনবহির্ভূত কাজ করলেও সেটি যদি গুরুতর আঘাত বা মৃত্যুর আশঙ্কা সৃষ্টি না করে, তা হলে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার থাকবে না। একইভাবে কোনো ব্যক্তি পদাধিকারবলে সরকারি কর্মচারীর নির্দেশ পালনে বা পালনের উদ্যোগকালে আইনের দৃষ্টিতে যথার্থ না হলে মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের কারণ না থাকলে কেউ ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না। সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে আশ্রয় নেয়ার সময় থাকলে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার থাকে না। [৪]
যদি সরকারী কর্তৃপক্ষের শরণাপন্ন হয়ে উপযুক্ত রক্ষামূলক প্রতিকার পাবার মত সময় থাকে, তবে সেক্ষেত্রে কোনো অপরাধমূলক কাজের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না।
ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার জন্য যতটুকু আঘাত করা প্রয়োজন, তার অতিরিক্ত করা অবৈধ। দণ্ডবিধির ৩০০ ধারায় ২ নাম্বার ব্যতিক্রমে বলা হয়েছে, অপরাধকারী সৎ বিশ্বাসে তার দেহ বা সম্পত্তি সম্পর্কিত ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা অধিকার প্রয়োগকালে পূর্বপরিকল্পনা ব্যতীত ও অনুরূপ প্রতিরক্ষার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ক্ষতি থেকে বেশি ক্ষতি সাধনের অভিপ্রায় না করে তার প্রতি আইন প্রদত্ত ক্ষমতাসমূহ অতিক্রম করলে এবং যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে এরকম প্রতিরক্ষা অধিকার প্রয়োগ করা হয়, তার মৃত্যু ঘটালে দ-ার্হ নরহত্যাকে 'খুন' হিসেবে অভিহিত করা হবে না। [৩][৪]
IPC-এর ধারা 96 থেকে 106 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে পর্যন্ত আত্মরক্ষার অধিকারের বিধান রয়েছে। এর আওতায় প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিরাপত্তা, তার স্ত্রীর নিরাপত্তা, তার সন্তানদের নিরাপত্তা, তার কাছের মানুষদের নিরাপত্তা এবং তার সম্পত্তি রক্ষা করতে পারবে। আইনের ভাষায় একে বলা হয় আত্মরক্ষার অধিকার অর্থাৎ আত্মরক্ষার অধিকার ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে।
তথ্যসূত্র
- ↑ মহি কুমারী। "প্রাইভেট ডিফেন্স" (ইংরেজি ভাষায়)। লিগ্যাল সার্ভিস ইন্ডিয়া। সংগ্রহের তারিখ 24.01.17। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ ক খ ভারতীয় দণ্ডবিধি (১৯৯১)। মেজর ক্রিমিনাল এক্ট। কলকাতা: ল'ম্যান পাবলিশিং হাউস। পৃষ্ঠা ৪৪।
- ↑ ক খ গ "আত্মরক্ষার অধিকার"। বাংলা নিউজ ২৪। নভেম্বর ০৫, ২০১৫। ১১ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 26 জানুয়ারি 2017। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ ক খ "আত্মরক্ষার অধিকার"। যায় যায় দিন। ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ 26 জানুয়ারি 2017। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য)
গ্রন্থপঞ্জি
- Carpenter, Catherine L. (২০০৩)। "Of the Enemy Within, The Castle Doctrine, and Self-Defense"। Marquette Law Review। 86 (4): 653–700।
- Sir Edward Coke, The First Part of the Institutes of the Laws of England, or, A Commentary on Littleton (London, 1628, ed. F. Hargrave and C. Butler, 19th ed., London, 1832)
- Dressler, Joshua, New Thoughts About the Concept of Justification in the Criminal Law: A Critique of Fletcher's Thinking and Rethinking, (1984) 32 UCLA L. Rev. 61.
- Fletcher, George P. (1990) Crime of Self-Defense: Bernhard Goetz and the Law on Trial, Chicago: University of Chicago Press, আইএসবিএন ০-২২৬-২৫৩৩৪-১.
- Fletcher, George P. (2000) Rethinking Criminal Law, Oxford: Oxford University Press, আইএসবিএন ০-১৯-৫১৩৬৯৫-০.
- Getman, Julius G; Marshall, F Ray (২০০১)। "The Continuing Assault on the Right to Strike"। Texas Law Review। 79 (3): 703।
- Green, Stuart P. (১৯৯৯)। "Castles and Carjackers: Proportionality and the Use of Deadly Force in Defense of Dwellings and Vehicles"। University of Illinois Law Review। 1999 (1)। এসএসআরএন 123890
।
- McCoy, Scott D. (২০০১)। "The Homosexual-Advance Defense and Hate Crimes Statutes: Their Interaction and Conflict"। Cardozo Law Review। 22 (2): 629।
- Maguigan, H. (১৯৯১)। "Battered Women and Self-Defense: Myths and Misconceptions in Current Reform Proposals"। University of Pennsylvania Law Review। 140 (2): 379–486। জেস্টোর 3312349। ডিওআই:10.2307/3312349।
- Nourse, V. F. (২০০১)। "Self-Defense and Subjectivity"। The University of Chicago Law Review। 68 (4): 1235–1308। জেস্টোর 1600480। ডিওআই:10.2307/1600480।
- Schopp, Robert F. (1998) Justification Defenses and Just Convictions, Cambridge: Cambridge University Press, আইএসবিএন ০-৫২১-৬২২১১-৫.
- Segev, Re'em (২০০৫)। "Fairness, Responsibility and Self-Defense"। Santa Clara Law Review। 45 (2): 383–460। এসএসআরএন 756947
।
- Semeraro, (2006) Osservazioni sulla riforma della legittima difesa ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ জুলাই ২০১১ তারিখে
- Vitu, Legitime defense et infraction d'imprudence, Revue de Science Criminelle, 1987, 865.
বহিঃসংযোগ
- UseofForce.us, an independent, in-depth breakdown of US self-defense legalities.
- Self-Defence and the Canadian Criminal Code, a look at reasonable force as it applies in Canadian law.
"Self-Defense"। ক্যাথলিক বিশ্বকোষ। নিউ ইয়র্ক: রবার্ট অ্যাপলটন কোম্পানি। ১৯৯৩।