আবদুল্লাহিল আমান আযমী

আবদুল্লাহিল আমান আযমী
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মবড় মগবাজার, ঢাকা,  বাংলাদেশ
পিতাগোলাম আযম
পুরস্কারসোর্ড অফ অনার (বিএমএ)
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্য বাংলাদেশ
শাখা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
কাজের মেয়াদ১৯৮১-২০০৯
পদBangladesh-army-OF-6 ব্রিগেডিয়ার জেনারেল
ইউনিটইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট
কমান্ড

আবদুল্লাহিল আমান আযমী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির প্রয়াত অধ্যাপক গোলাম আজমের মেঝো ছেলে।[] তিনি ২০১৬ সালে গুমের স্বীকার হন এবং রাখা হয় আয়নাঘরে[][] অসহযোগ আন্দোলন (২০২৪)-এর মাধ্যমে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে তাকে পরের দিন ৬ আগস্ট মুক্তি দেওয়া হয়।[]

প্রথম জীবন

আবদুল্লাহিল আমান আযমী গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল থেকে এসএসসি সম্পন্ন করেন। নটর ডেম কলেজ, ঢাকা থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন তারপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৮১ সালের ডিসেম্বরে তিনি ৫ম বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমী দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকে ২য় লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশনপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।

পেশা

সেনাবাহিনীতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি বরখাস্ত হন।[][] যদিও ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর আযমীর বরখাস্তের আদেশ প্রমার্জনা করা হয়েছে।[] বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে ২০০৯ সালের ২৪ জুন থেকে তাঁকে ভূতাপেক্ষভাবে ‘অকালীন অবসর’ দেওয়া হয়েছে।[] ১২ নভেম্বর ২০১২ সালে আবদুল্লাহিল আমান আযমী তার বাবা অধ্যাপক গোলাম আজমের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারে প্রতিরক্ষা সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন। তিনিই বিচারের একমাত্র প্রতিরক্ষা সাক্ষী ছিলেন। [] তার পিতা অধ্যাপক গোলাম আজমের বিচারের বিষয়ে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের উপর হতাশা প্রকাশ করেছিলেন। [১০] তিনি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে তার বাবার জানাযার ইমামতি করেন। [১১]

বিতর্ক

মুক্তিযুদ্ধে চার হাজার ভারতীয় সেনা শহীদের তথ্য দিয়ে গত ২৮ মে ২০১৫ তারিখে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন সাংবাদিক অঞ্জন রায়।[১২] ফেইসবুকে অঞ্জন রায়ের লেখার প্রতিক্রিয়ায় একটি পোস্টে তাকে ‘দালাল’ বলে ইঙ্গিত করেন আমান আযমী। মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের তথ্যকে ‘কাল্পনিক’ আখ্যায়িত করেন তিনি। অঞ্জন রায় থানায় ডায়েরি করেন।[১৩]

২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আবদুল্লাহিল আমান আযমী গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় জাতীয় সংগীত নিয়ে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পুনরায় লেখা উচিত, কারণ বর্তমান জাতীয় সংগীতটি মূলত ভারত কর্তৃক প্রণীত”। তার মতে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত "আমার সোনার বাংলা" গানটি ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ রদের প্রেক্ষাপটে দুই বাংলাকে একত্রিত করার উদ্দেশ্যে রচিত হয়েছিল। আযমী বলেন, "বাংলাদেশ স্বাধীন একটি রাষ্ট্র, তাই আমাদের জাতীয় সংগীতও নতুনভাবে হওয়া উচিত।"[১৪] তিনি আরও বলেন, "আমরা কি দুই বাংলা এক করার জন্য কাজ করছি, নাকি স্বাধীন বাংলাদেশকে রক্ষা করতে চাই? ১৯৭১ সালে ভারতের চাপের ফলে আমাদের অস্থায়ী সরকার এই সংগীতকে গ্রহণ করেছিল, কিন্তু এখন সময় এসেছে নতুন একটি জাতীয় সংগীত নির্বাচন করার।" আযমী আরও বলেন, "বাংলাদেশের আরও অনেক সুন্দর গান আছে যা আমাদের জাতীয় সংগীত হিসেবে নির্বাচন করা যেতে পারে।"[১৫] একই সময় তিনি মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লক্ষ শহীদদের সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।[১৬]

অন্তর্ধান ও মুক্তি

আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে ২৪ আগস্ট ২০১৬ তারিখে ঢাকার বড় মগবাজার কাজী অফিস লেনের বাসা থেকে সাদা পোশাকে আইন শৃংখলা বাহিনী পরিচয় দিয়ে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়।[১৭] প্রায় একই সময়ে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাসেম আরমান ও একই অপরাধে ফাঁসি হওয়া সাকা চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের সকলকে গুপ্ত কারাগার আয়নাঘরে বন্দী রাখা হয়।[১৮] ২০১৪ সালে আজমীর বাবা যুদ্ধাপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর কারাগারে মারা যান। [১৯][২০] ২০১৭ সালের মার্চ মাসে হুমাম কাদের চৌধুরীকে মুক্তি দেওয়া হয়।[১৮][২১] ২০২৪ সালে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারের পতন হলে তাকে ও ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম আরমানকে মুক্তি দেওয়া হয়।[২২]

তথ্যসূত্র

  1. "Ex-Jamaat leader's son abducted in Dhaka"Arab News (ইংরেজি ভাষায়)। ২৩ আগস্ট ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  2. Rowlatt, Justin (১৩ অক্টোবর ২০১৬)। "Fears over Bangladesh's 'disappeared'"। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  3. "How Enforced Disappearances Get Suppressed in Bangladeshi Media"The Diplomat। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  4. প্রতিবেদক, জ্যেষ্ঠ (২০২৪-০৮-০৬)। "মায়ের কোলে ফিরলেন গোলাম আযমের ছেলে"dhakapost.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০৬ 
  5. "গোলাম আযমের ছেলেরা কে কোথায় | বাংলাদেশ প্রতিদিন"Bangladesh Pratidin (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৩-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৯ 
  6. "Brig Gen Azmi dismissed"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২৫ জুন ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  7. "আমান আযমীকে বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে অকালীন অবসর, পাবেন সব সুবিধা"দৈনিক প্রথম আলো। ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪। 
  8. "ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আযমীর বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার"VOA বাংলা। ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪। 
  9. "Defended only by his son"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ১৬ জুলাই ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  10. "Ghulam Azam family upset with BNP"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ৩১ অক্টোবর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  11. "A tricky last wish that could not be fulfilled"thenews.com.pk (ইংরেজি ভাষায়)। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  12. "গোলাম আযমের ছেলের বিরুদ্ধে থানায় জিডি"কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৯ 
  13. ডটকম, নিজস্ব প্রতিবেদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর। "আযমীর 'হুমকিতে' অঞ্জন রায়ের জিডি"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২০২১-০৯-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৯ 
  14. "নতুন করে সংবিধান ও জাতীয় সংগীত রচনার দাবি আয়নাঘরফেরত আযমীর"www.kalerkantho.com। ২০২৪-০৯-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৯-০৫ 
  15. "জাতীয় সংগীত ও সংবিধান পরিবর্তন চান আমান আযমী"জাতীয় সংগীত ও সংবিধান পরিবর্তন চান আমান আযমী। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৯-০৫ 
  16. "৩ লাখকে ৩০ লাখ বলে ঘোষণা করেছিলেন শেখ মুজিব: ব্রিগেডিয়ার আযমী"যুগান্তর। ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪। 
  17. Bergman, David। "Bangladesh's many 'disappeared' often return dead – if at all"Scroll.in। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  18. "এত দিন কোথায় ছিলেন জানেন না হুম্মাম কাদের"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৯ 
  19. "Bangladesh police accused of abducting ex-JI chief's son"dawn.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২৪ আগস্ট ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  20. "Concern over missing sons of Bangladeshi politicians"www.aljazeera.com। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  21. "Hummam Quader cannot remember anything about abduction"ঢাকা ট্রিবিউন। ৩ মার্চ ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  22. "ব্যারিস্টার আরমান এখন মুক্ত"নয়া দিগন্ত। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৯-০৪