টেলিযোগাযোগের ইতিহাস
টেলিযোগাযোগের ইতিহাস আফ্রিকা, এশিয়া এবং আমেরিকার ধোঁয়া সংকেত এবং ড্রামের ব্যবহার দিয়ে শুরু হয়েছিল। টেলিযোগাযোগের ইতিহাস যোগাযোগের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
প্রাচীন সিস্টেম এবং অপটিক্যাল টেলিগ্রাফি
প্রাথমিক টেলিযোগাযোগে ধোঁয়া সংকেত এবং ড্রাম অন্তর্ভুক্ত ছিল। আফ্রিকার অধিবাসীরা ড্রাম এবং উত্তর আমেরিকা এবং চীনে ধোঁয়া সংকেত ব্যবহার করত। ইতিহাসে মাঝে মাঝে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে কবুতরও ব্যবহৃত হয়েছে।
মধ্যযুগের সময়, সাধারণত সঙ্কেত পাঠাতে পাহাড়ের চূড়ায় আলোক-সঙ্কেত ব্যবহৃত হত। আলোক-সঙ্কেত ব্যবহারের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ স্প্যানিশ আর্মাডা, যখন আলোক-সঙ্কেতের মাধ্যমে প্লাইমাউথ থেকে লন্ডনে স্প্যানিশ যুদ্ধজাহাজের আগমন বার্তা জানানো হয়েছিল।[১]
বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফ
বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফের উপর গবেষণা প্রায় ১৭২৬ সালে শুরু হয়েছিল যা প্রাথমিকভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। লাপ্লাস, অম্পেয়্যার এবং গাউসসহ বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে গবেষণা করেছিলেন।
প্রথম কার্যকর টেলিগ্রাফটি ১৮১৬ সালে ফ্রান্সিস রোনাল্ডস দ্বারা নির্মিত হয়েছিল এবং এতে স্থির বিদ্যুত ব্যবহার করা হয়েছিল।[২]
আটলান্টিক মহাসাগরের অপর প্রান্তে, স্যামুয়েল মোর্স বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফের একটি সংস্করণ তৈরি করেছিলেন যা তিনি ২রা সেপ্টেম্বর ১৮৩৭ সালে প্রদর্শিত করেছিলেন। টেলিগ্রাফে মোর্সের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত অবদান ছিল সহজ এবং অত্যন্ত কার্যকর মোর্স কোড, যা তিনি আলফ্রেড ভেইলের সাথে যৌথভাবে তৈরি করেছিলেন।
প্রথম সফল ট্রান্সটল্যান্টিক টেলিগ্রাফ কেবলটি ২৭ই জুলাই ১৮৬৬ সালে সম্পন্ন হয়েছিল এবং প্রথমবারের জন্য অবিচ্ছিন্ন ট্রান্সটল্যান্টিক টেলিযোগাযোগের সূচনা হয়েছিল।
টেলিফোন
বৈদ্যুতিক টেলিফোন ১৮৭০ সালে আবিষ্কার হয়েছিল। প্রথম বাণিজ্যিক টেলিফোন পরিষেবা ১৮৭৮ সালে স্থাপিত হয়েছিল এবং ১৮৭৯ সালে আটলান্টিকের উভয় পাশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাভেন, কানেটিকাট এবং যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরে স্থাপিত হয়েছিল। দুটি দেশের ক্ষেত্রে এই জাতীয় পরিষেবার টেলিফোনের মাস্টার পেটেন্ট করেছিলেন আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল।[৩]
১৮৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি বড় শহরে আন্তঃশহরের লাইন তৈরি এবং টেলিফোন এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বাণিজ্যিক পরিষেবাগুলির উত্থানের ফলে টেলিফোন প্রযুক্তি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছিল।[৪][৫][৬]
বেতার এবং টেলিভিশন
১৮৯৪-১৮৯৬ সময়ে বাঙালি পদার্থবিদ জগদীশ চন্দ্র বসু অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ যোগাযোগের প্রথম গবেষণা করেছিলেন, তিনি অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ সৃষ্টি এবং কোন তার ছাড়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তা প্রেরণে সফলতা পান। তিনি তার পরীক্ষায় ৬০ গিগাহার্টজ পর্যন্ত অত্যন্ত উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে পৌঁছেছিলেন। [৭]
১৯২৪ সালে, জাপানি প্রকৌশলী কেনজিরো তাকায়নাগি বৈদ্যুতিক টেলিভিশন নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। ১৯২৫ সালে, তিনি থার্মাল ইলেকট্রন এম্মিসনসহ একটি সিআরটি টেলিভিশন প্রদর্শন করেছিলেন।[৮]
ট্রানজিস্টর
ট্রানজিস্টর প্রযুক্তির বিকাশ আধুনিক ইলেকট্রনীয় টেলিযোগযোগে মৌলিক অবদান রেখেছে।[৯][১০][১১] পদার্থবিজ্ঞানী জুলিয়াস এডগার লিলেনফেল্ড ১৯২৬ সালে ফিল্ড-ইফেক্ট ট্রানজিস্টরের ধারণাটি প্রস্তাব করেছিলেন, কিন্তু সেই সময়ে কার্যত কোনও ডিভাইস নির্মাণ করা সম্ভব ছিল না।[১২] ১৯৪৭ সালে বেল ল্যাবসে উইলিয়াম শকলির অধীনে কাজ করার সময় জন বারডিন এবং ওয়াল্টার হাউজার ব্র্যাটেইন প্রথম কার্যকর ট্রানজিস্টর, পয়েন্ট-কন্টাক্ট ট্রানজিস্টর আবিষ্কার করেছিলেন।[১০]
স্যাটেলাইট
মার্কিন উপগ্রহ প্রজেক্ট এসকোর ১৯৫৮ সালে ভয়েস বার্তা সংরক্ষণ এবং ফরোয়ার্ড করতে একটি টেপ রেকর্ডার ব্যবহার করে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোয়াইট ডি. আইজেনহাওয়ারের কাছ থেকে বিশ্বের কাছে ক্রিসমাসের শুভেচ্ছা পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। আজকাল স্যাটেলাইট অনেক অ্যাপ্লিকেশনে যেমন জিপিএস, টেলিভিশন, ইন্টারনেট এবং টেলিফোনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট
টেলিফোন এবং টেলিভিশন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে শতাব্দীর শেষের দিকে ইন্টারনেট অধিগমন ব্যাপক আকার ধারণ করে।
উন্নত বৈদ্যুতিক এবং ইলেকট্রনীয় সংকেত
- ১৮৯৬: বেতারের ভিত্তিতে প্রথম ব্যবহারিক ওয়্যারলেস টেলিগ্রাফি সিস্টেম। বেতারের ইতিহাস
- ১৯০০: প্রথম টেলিভিশন কেবল কালো এবং সাদা চিত্র প্রদর্শিত হয়েছিল। পরবর্তী দশকগুলিতে, রঙিন টেলিভিশন উদ্ভাবন করা হয়েছিল, চিত্রগুলি পরিষ্কার এবং পূর্ণ রঙ্গীন হয়েছিল।
- ১৯১৪: প্রথম উত্তর আমেরিকার আন্তর্মহাদেশীয় টেলিফোন যোগাযোগ স্থাপন
- ১৯২৭: টেলিভিশন
- ১৯২৭: প্রথম বাণিজ্যিক রেডিও-টেলিফোন পরিষেবা, ইউ.কে.ইউ.এস.এস.
- ১৯৩০: প্রথম পরীক্ষামূলক ভিডিওফোন
- ১৯৩৪: প্রথম বাণিজ্যিক রেডিও-টেলিফোন পরিষেবা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র – জাপান
- ১৯৩৬: বিশ্বের প্রথম পাবলিক ভিডিওটেলিফোনি নেটওয়ার্ক
- ১৯৪৬: মোটরগাড়ির জন্য সীমাবদ্ধ ক্ষমতা মোবাইল টেলিফোন পরিষেবা
- ১৯৪৭: প্রথম কার্যকর ট্রানজিস্টর
- ১৯৫০: অর্ধপরিবাহী যুগ শুরু হয়
- ১৯৫৬: ট্রান্সলেট্যান্টিক টেলিফোন তার
- ১৯৫৯: মেটাল অক্সাইড সেমিকন্ডাক্টর ফিল্ড-ইফেক্ট ট্রানজিস্টর (মসফেট)
- ১৯৬২: বাণিজ্যিক টেলিযোগাযোগ স্যাটেলাইট
- ১৯৬৪: ফাইবার-অপটিক যোগাযোগ
- ১৯৬৫: প্রথম উত্তর আমেরিকার পাবলিক ভিডিওফোন নেটওয়ার্ক
- ১৯৬৯: কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং
- ১৯৭২: স্বতন্ত্র কোসাইন রূপান্তর ডিজিটাল মিডিয়া উপাত্ত সংকোচন
- ১৯৭৩: প্রথম আধুনিক যুগের মোবাইল (সেলুলার) ফোন
- ১৯৭৪: ইন্টারনেট (see ইন্টারনেটের ইতিহাস)
- ১৯৭৯: ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল স্যাটেলাইট অর্গানাইজেশন
- ১৯৮১: প্রথম মোবাইল (সেলুলার) ফোন নেটওয়ার্ক
- ১৯৮২: এসএমটিপি ইমেল
- ১৯৯৮: মোবাইল স্যাটেলাইট ফোন
- ২০০৩: ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল
আরও দেখুন
- ইন্টারনেটের ইতিহাস
- বেতারের ইতিহাস
- টেলিভিশনের ইতিহাস
- টেলিফোনের ইতিহাস
- ভিডিওটেলিফোনির ইতিহাস
- তথ্যের যুগ
- তথ্য বিপ্লব
- টেলিযোগাযোগের রূপরেখা
তথ্যসূত্র
- ↑ David Ross, The Spanish Armada, Britain Express, October 2008.
- ↑ Ronalds, B.F. (২০১৬)। Sir Francis Ronalds: Father of the Electric Telegraph। London: Imperial College Press। আইএসবিএন 978-1-78326-917-4।
- ↑ Brown, Travis (১৯৯৪)। Historical first patents: the first United States patent for many everyday things (illustrated সংস্করণ)। University of Michigan: Scarecrow Press। পৃষ্ঠা 179। আইএসবিএন 978-0-8108-2898-8।
- ↑ Connected Earth: The telephone ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে, BT, 2006.
- ↑ History of AT&T ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে, AT&T, 2006.
- ↑ Page, Arthur W. (জানুয়ারি ১৯০৬)। "Communication By Wire And 'Wireless': The Wonders of Telegraph and Telephone"। The World's Work: A History of Our Time। XIII: 8408–8422। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৭-১০।
- ↑ "Milestones: First Millimeter-wave Communication Experiments by J.C. Bose, 1894-96"। List of IEEE milestones। Institute of Electrical and Electronics Engineers। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৯।
- ↑ "Milestones:Development of Electronic Television, 1924-1941"। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১১, ২০১৫।
- ↑ Jakubowski, A.; Łukasiak, L. (২০১০)। "History of Semiconductors"। Journal of Telecommunications and Information Technology। nr 1: 3–9।
- ↑ ক খ Lambert, Laura; Poole, Hilary W.; Woodford, Chris; Moschovitis, Christos J. P. (২০০৫)। The Internet: A Historical Encyclopedia। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 16। আইএসবিএন 9781851096596।
- ↑ Gaudin, Sharon (১২ ডিসেম্বর ২০০৭)। "The transistor: The most important invention of the 20th century?"। Computerworld। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৯।
- ↑ "1926 – Field Effect Semiconductor Device Concepts Patented"। Computer History Museum। মার্চ ২২, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ২৫, ২০১৬।