ড্যানিয়েল ডে-লুইস
ড্যানিয়েল ডে-লুইস | |
---|---|
জন্ম | ড্যানিয়েল মাইকেল ব্লেইক ডে-লুইস ২৯ এপ্রিল ১৯৫৭ |
পেশা | অভিনেতা |
কর্মজীবন | ১৯৭১-বর্তমান |
দাম্পত্য সঙ্গী | রেবেকা মিলার (১৯৯৬-বর্তমান) |
সঙ্গী | ইসাবেল অ্যাডজানি (১৯৮৯-১৯৯৪) |
ড্যানিয়েল মাইকেল ব্লেইক ডে-লুইস (ইংরেজি: Daniel Michael Blake Day-Lewis, প্রতিবর্ণীকৃত: ড্যানিয়াল্ মাইকাল্ ব্লেইক্ ডেই-লূইস্) (জন্ম: ২৯ এপ্রিল, ১৯৫৭) একজন ইংরেজ অভিনেতা এবং ১৯৯৩ সালে তিনি আইরিশ নাগরিকত্ত্ব লাভ করেন।[১][২][৩][৪][৫] চলচ্চিত্র জগতে তার পরিচয় অত্যন্ত বাছবিচার করে চলা একজন অভিনেতা হিসেবে, যিনি ১৯৯৭ সালের পর থেকে এখন পর্যণ্ত মাত্র চারটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।[৬] আর এসব চরিত্রে অভিনয় করতে তার পাঁচ বছর সময় চলে গিয়েছে। তিনি একজন মেথড অ্যাক্টর। অর্থাৎ, তিনি অভিনয় করেন অত্যন্ত সুসংবদ্ধভাবে। তার চরিত্রে অভিনয়ের ক্ষেত্রে কঠোর অধ্যবসায় ও গবেষণা করার জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত।[১] প্রায় সময়ই দেখা যায়, কোনো একটি চলচ্চিত্রে কাজ করার সময় পুরো সময়টাই তিনি তার চরিত্রের মতো জীবনযাপন করেন।[৬]
ক্রিসটি ব্রাউন হিসেবে মাই লেফট ফুট (১৯৮৯) এবং ড্যানিয়েল প্লেইনভিউ হিসেবে দেয়ার উইল বি ব্লাড (২০০৭) চলচ্চিত্রে তার চরিত্রচিত্রণ তাকে অ্যাকাডেমি, বাফটা পুরস্কার, এবং স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কার এনে দেয়। এছাড়া দেয়ার উইল বি ব্লাড চলচ্চিত্রের জন্য তিনি একটি গ্লোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার এবং গ্যাঙ্গস অফ নিউ ইয়র্ক চলচ্চিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি বাফটা পুরস্কার ও স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কার লাভ করেন।
প্রাথমিক জীবন
ডে-লুইসের জন্ম যুক্তরাজ্যে। তার বাবা সিসিল ডে-লুইস ছিলেন একজন আইরিশ কবি। তার মা অভিনেত্রী জিল ব্যালকন ছিলেন একজন বাল্টিক বংশোদ্ভুত ইহুদি এবং তার বাবার নাম ছিলো স্যার মাইকেল ব্যালকন। মি. ব্যালকন ইয়েলিং স্টুডিওর সাবেক প্রধান ছিলেন।[৭][৮] ড্যানিয়েল ডে-লুইসের জন্মের দুই বছর পর তার পরিবার গ্রীনিচের ক্রুম’স হিলে চলে আসে। এখানেই তিনি তার বড়ো বোনের সাথে বেড়ে ওঠেন। তার বড়ো বোনের নাম টামাসিন ডে-লুইস, যিনি পরবর্তীতে পেশাজীবনে একজন তথ্যচিত্র নির্মাতা এবং টেলিভিশনে রাধুনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ডে-লুইসের জন্মের সময় তার মায়ের বয়স ছিলো ৫৩ বছর এবং সন্তানদের প্রতি তার খুব একটা আগ্রহ ছিলো না।[৯] তিনি সেসময় নানা রকম অসুখ-বিসুখে ভুগতেন। আর বিভিন্ন স্বাস্থ্যসমস্যার ফলে ডে-লুইসের মাত্র ১৫ পনেরো বছর বয়সে তিনি মারা যান। সে সময় ডে-লুইস আবেগগত ভাবে খুব একটা পরিপক্ব ছিলেন না এবং বাবার সাথেও তার দূরত্ব ছিলো।
শৈশবে ডে-লুইসের অতিরিক্ত দুষ্টামির কারণে তার মা-বাবা ১৯৬৮ সালে, কেন্টের সেভেনঅক্স বিদ্যালয়ে আবাসিক ছাত্র হিসেবে ভর্তি করিয়ে দেন।[২] সেখানে তার সাথে পরিচয় হয় তার অন্যতম দুইটি আগ্রহের বিষয়ের সাথে—কাঠের কাজ এবং অভিনয়। সেভেনঅক্স-এ দুই বছর কাটানোর পর, তিনি বিদ্যালয় বদল করেন। তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় পিটারসফিল্ডের বেডালেস বিদ্যালয়ে, যেখানে তার বোন ভর্তি হয়েছিলে।[২] বিদ্যালয় বদলের পর ১৪ বছর বয়সে সানডে ব্লাডি সানডে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। এখানে তিনি অভিনয় করেছিলেন
পেশাজীবন
১৯৮০-এর দশক
আশির দশকের শুরুর দিকে ডে-লুইস মঞ্চ এবং টেলিভিশন উভয় মাধ্যমেই কাজ করতেন। বিবিসির জন্যে তখন তিনি দুটি নাটকে অভিনয় করেন। একটি ছিলো ফ্রস্ট ইন মে, যেখানে তিনি একজন পুরুষত্বহীনের ভূমিকায় অভিনয় করেন এবং অপর নাটকটি ছিলো হাউ মেনি মাইলস টু ব্যাবিলন? এখানে তিনি অভিনয় করেন একজন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সেনা কর্মকর্তার চরিত্রে। চলচ্চিত্রে তার অভিষেকের এগারো বছর পর, ডে-লুইস গান্ধী (১৯৮২) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার নিয়মিত চলচ্চিত্রাভিনয় শুরু করেন। এখানে তার চরিত্রের নাম ছিলো কলিন।
১৯৯০-এর দশক
অস্কার জয়ের তিন বছর পর, ১৯৯২ সালে তার অভিনীত দ্য লাস্ট অফ দ্য মোহিকানস চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়।
১৯৯৩ সালে ডে-লুইস এডিথ হোয়ারটনের উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে নির্মীত, মার্টিন স্করসেস পরিচালিত চলচ্চিত্র দি এজ অফ ইনোসেন্স-এ অভিনয় করেন। সেখানে তার চরিত্রের নাম ছিলো নিউল্যান্ড আর্চার এবং তিনি অভিনয় করেছিলেন ওয়াইনোনা রাইডার ও মিশেল ফেইফারের বিপরীতে।
২০০০-এর দশক
চলচ্চিত্র জগতে পাঁচ বছর অনুপস্থিতির পর ২০০০ সালে তাকে দেখা যায় একাধিক অ্যাকাডেমি পুরস্কার মনোনয়ন প্রাপ্ত চলচ্চিত্র গ্যাঙ্গস অফ নিউ ইয়র্কে। এই চলচ্চিত্রটির পরিচালনায় ছিলেন মার্টিন স্করসেস, যার সাথে ডে-লুইস এজ অফ ইনোসেন্সে কাজ করেছিলেন। এই চলচ্চিত্রটির প্রযোজক ছিলেন হারভে ওয়েনস্টেইন। এখানে ডে-লুইসের চরিত্রটি ছিলো খলনায়কের এবং তিনি গ্যাঙ্গ লিডার “বিল দ্য বুচার” (বাংলায়: কসাই বিল)-এর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন এবং সেখানে নায়ক ছিলেন লিওনার্ডো ডিক্যাপ্রিও। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সময় তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। কিন্তু তিনি চিকিৎসা নিতে বা গরম পোশাক পরতে অস্বীকৃতি জানান।
গ্যাঙ্গস অফ নিউ ইয়র্কের পর তার স্ত্রী রেবেকা মিলারের প্রস্তাবে তার ছবি দ্য ব্যালাড অফ জ্যাক এন্ড রোজ-এ অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। এখানে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন একজন বাবার চরিত্র যিনি তার মাতৃহীন মেয়েকে একা বড়ো করে তুলেছেন এবং সেই সাথে তিনি তার জীবন নিয়ে অনুতপ্ত। এই চরিত্রটির বাস্তবতা বোঝার জন্য ডে-লুইস চলচ্চিত্রটিতে কাজ করার সময় তার স্ত্রীর থেকে আলাদা থাকতেন। চলচ্চিত্রটি মিশ্র প্রশংসা লাভ করে।
২০০৭ সালে ডে-লুইসকে দেখা যায় পল থমাস অ্যান্ডারসন পরিচালিত চলচ্চিত্র দেয়ার উইল ব্লাড চলচ্চিত্রে। চলচ্চিত্রটি আপটন সিনক্লেয়ার রচিত উপন্যাস ওয়েল! (Oil!)-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিলো। ডে-লুইস চলচ্চিত্রটিতে অভিনয়ের জন্য ২০০৮ সালে বাফটা, স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড (যা তিনি হিথ লেজারকে উৎসর্গ করেন), ক্রিটিক্স চয়েজ, গোল্ডেন গ্লোব, এবং অ্যাকাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।
ব্যক্তিগত জীবন
ডে-লুইসের যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডের দ্বৈত নাগরিকত্ত্বের অধিকারী। ১৯৯৩ সালে তিনি তার আইরিশ নাগরিকত্ত্ব লাভ করেন।
তিনি তার পারিবারিক জীবন সম্মন্ধে জনসম্মুখে খুব কমই কথা বলেন। ফরাসি অভিনেত্রী ইসাবেল অ্যাডজানির সাথে তার প্রেম ছিলো, যা ছয় বছর স্থায়ী হয়েছিলো এবং অবশেষে
১৯৯৬ সালে তিনি যখন মঞ্চনাটক দ্য ক্রুসিবলের চলচ্চিত্ররূপে অভিনয় করার সময় তিনি নাট্যকার আর্থার মিলারের বাড়িতে বেড়াতে যান এবং সেখানে তার পরিচয় হয় লেখকের মেয়ে রেবেকা মিলারের সাথে এবং তারপর তা পরিণয়ে গড়ায়। এই দম্পতির দুইটি ছেলে আছে। তাদের নাম রোনান ক্যাল ডে-লুইস (জন্ম: ১৪ জুন, ১৯৯৮) এবং ক্যাশেল ব্লেইক ডে-লুইস (জন্ম: মে, ২০০২)। যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডের বাড়িতে তারা তাদের সময়টা ভাগাভাগি করে কাটান।
ড্যানিয়েল ডে-লুইস মিলওয়াল ফুটবল ক্লাবের একজন সমর্থক।
চলচ্চিত্র তালিকা
চলচ্চিত্র, পুরস্কার ও মনোনয়সমূহ
Year | Film | Role | Notes |
---|---|---|---|
১৯৭১ | সানডে ব্লাডি সানডে | শিশু ভ্যানডাল | (uncredited) |
১৯৮২ | গান্ধী | কলিন - দক্ষিণ আফ্রিকান রাস্তার | |
১৯৮৪ | দ্য বাউন্টি | জন ফ্রাইয়ার | |
১৯৮৫ | মাই বিউটিফুল লনড্রেট | জনি | National Board of Review Award for Best Supporting Actor New York Film Critics Circle Award for Best Supporting Actor |
আ রুম উইথ আ ভিউ | সিসিল ভাইস | National Board of Review Award for Best Supporting Actor New York Film Critics Circle Award for Best Supporting Actor | |
১৯৮৬ | নানৌ | ম্যাক্স | |
১৯৮৮ | দি আনবিয়ারেবল লাইটনেস অফ বিইং | টমাস | |
স্টারস এন্ড বারস | হেন্ডারসন ডোর্স | ||
১৯৮৯ | এভারস্মাইল, নিউ জার্সি | ড. ফারগাস ও'কানেল | |
মাই লেফট ফুট | ক্রিস্টি ব্রাউন | বিজয়ী - সেরা অভিনেতা বিভাগে অ্যাকাডেমি পুরস্কার BAFTA Award for Best Actor NYFCC Award for Best Actor Nominated - Golden Globe Award for Best Actor | |
১৯৯২ | দ্য লাস্ট অফ দ্য মোহিকানস | হওঅকি (নাথানিয়েল পো) | মনোনীত - BAFTA Award for Best Actor |
১৯৯৩ | দ্য এইজ অব ইনোসেন্স | Newland Archer | |
ইন দ্য নেম অব দ্য ফাদার | Gerry Conlon | Nominated - Academy Award for Best Actor Nominated - BAFTA Award for Best Actor Nominated - Golden Globe Award for Best Actor | |
১৯৯৬ | দ্য ক্রুসিবল | John Proctor | |
১৯৯৭ | দ্য বক্সার | Danny Flynn | Nominated - Golden Globe Award for Best Actor |
২০০২ | গ্যাংস অব নিউ ইয়র্ক | Bill 'The Butcher' Cutting | BAFTA Award for Best Actor NYFCC Award for Best Actor Screen Actors Guild Award for Best Actor Nominated - Academy Award for Best Actor Nominated - Golden Globe Award for Best Actor |
২০০৫ | দ্য ব্যালাড অব জ্যাক অ্যান্ড রোজ | Jack Slavin | |
২০০৭ | দেয়ার উইল বি ব্লাড | Daniel Plainview | Academy Award for Best Actor Austin Film Critics Award for Best Actor BAFTA Award for Best Actor Golden Globe Award for Best Actor IFTA Award for Best Actor NYFCC Award for Best Actor Screen Actors Guild Award for Best Actor Nominated - Saturn Award for Best Actor |
২০০৯ | নাইন | Guido Contini | In Post-production |
২০১০ | সাইলেন্স | Father Cristóvão Ferreira | Pre-production |
তথ্যসূত্র
- ↑ ক খ Parker, Emily. "Sojourner in Other Men's Souls". The Wall Street Journal. 23 January 2008.
- ↑ ক খ গ ""Daniel Day-Lewis Biography". Tiscali UK. Retrieved 25 February 2006."। ১০ এপ্রিল ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০০৯।
- ↑ "Dashing Daniel". Time, European Edition. 21 March 1994.
- ↑ "Day Lewis, Daniel: Gangs Of New York." ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ জুলাই ২০১৫ তারিখে UrbanCinefile.com.au. Accessed October 11, 2008.]
- ↑ "Daniel Day-Lewis Q&A." ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৬ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে TimeOut.com. 20 March 2006.
- ↑ ক খ Herschberg, Lynn. "The New Frontier's Man". New York Times Magazine. 11 November 2007.
- ↑ "Day-Lewis gets Oscar nod for new film"। Kent News। ২০০৭-১২-১৭। ২০০৮-০২-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-০৯।
- ↑ Pearlman, Cindy (২০০৭-১২-৩০)। "Day-Lewis isn't suffering: 'It's a joy'"। Chicago Sun-Times। ২০০৮-০১-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-০৯।
- ↑ Segal, David. "Daniel Day-Lewis, Behaving Totally In Character" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৬ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে. The Washington Post. 31 March 2005.