বুন্দেসলিগা

বুন্দেসলিগা
সংগঠকডয়চে ফুসবল লিগা (ডিএফএল)
স্থাপিত১৯৬৩; ৬০ বছর আগে (1963)
দেশজার্মানি জার্মানি
কনফেডারেশনইউরোপ উয়েফা
দলের সংখ্যা১৮
লিগের স্তর
অবনমিত২. বুন্দেসলিগা
ঘরোয়া কাপ
আন্তর্জাতিক কাপ
বর্তমান চ্যাম্পিয়নবায়ার্ন মিউনিখ (৩২তম শিরোপা)
(২০২২–২৩)
সর্বাধিক শিরোপাবায়ার্ন মিউনিখ (৩২টি শিরোপা)
সর্বাধিক ম্যাচপশ্চিম জার্মানি চার্লি কর্বেল (৬০২)
শীর্ষ গোলদাতাপশ্চিম জার্মানি গের্ড ম্যুলার (৩৫৪)
সম্প্রচারকসম্প্রচারকের তালিকা
ওয়েবসাইটbundesliga.com
২০২৩–২৪ বুন্দেসলিগা

বুন্দেসলিগা (জার্মান: [ˈbʊndəsˌliːɡa] (শুনুন); আ. অ. কেন্দ্রীয় লিগ), যা মাঝেমধ্যে ফুসবল-বুন্দেসলিগা ([ˌfuːsbal-]) অথবা ১. বুন্দেসলিগা নামেও পরিচিত ([ˌeːɐ̯stə-]) হলো একটি জার্মান পেশাদার ফুটবল লিগ। এটি জার্মান ফুটবল লিগ পদ্ধতির শীর্ষ স্তরের লিগ, যা জার্মানির প্রাথমিক ফুটবল প্রতিযোগিতা হিসেবেও পরিচিত। বুন্দেসলিগায় সর্বমোট ১৮টি দল অংশগ্রহণ করে থাকে, যা উত্তরণ এবং অবনমন পদ্ধতির ভিত্তিতে ২. বুন্দেসলিগার সাথে সম্পৃক্ত। সাধারণত বুন্দেসলিগার প্রতিটি মৌসুম এক বছরের আগস্ট মাসে শুরু হয়ে অন্য বছরের মে মাসে শেষ হয়ে থাকে; যার অধিকাংশ ম্যাচেই সপ্তাহের শনিবার এবং রবিবার আয়োজিত হয়ে থাকে, তবে কিছু ম্যাচ অন্যান্য দিনে আয়োজন করা হয়। বুন্দেসলিগায় খেলা প্রতিটি ক্লাবই ডিএফবি-পোকালে খেলার জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে উত্তীর্ণ হয়ে যায় এবং বুন্দেসলিগার বিজয়ী দল ডিএফবি-সুপারকাপে অংশগ্রহণ করে থাকে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এপর্যন্ত বুন্দেসলিগায় ৫৬টি ক্লাব অংশগ্রহণ করেছে। ২৯টি শিরোপা জয়লাভের মাধ্যমে এফসি বায়ার্ন মিউনিখ বুন্দেসলিগার সবচেয়ে সফল দল; এছাড়াও বরুসিয়া ডর্টমুন্ড, হামবুর্গার এসভি, ভেয়ার্ডার ব্রেমেন, বরুসিয়া মনশেনগ্লাডবাখ এবং ভিএফবি স্টুটগার্টের মতো দল বুন্দেসলিগা জয়লাভ করেছে। পূর্ববর্তী ৫ মৌসুমের ফলাফলের ভিত্তিতে, ২০১৯–২০ মৌসুমে প্রকাশিত উয়েফার লিগ গুণাঙ্কে বুন্দেসলিগা ইউরোপের তৃতীয় শ্রেষ্ঠ লিগ ছিল (এই লিগের উপরে শুধুমাত্র ইংরেজ ফুটবল লিগ প্রিমিয়ার লিগ এবং স্পেনীয় ফুটবল লিগ লা লিগা ছিল)।[১] গড় দর্শকের ভিত্তিতে বুন্দেসলিগা পৃথিবীর এক নম্বর ফুটবল লিগ; ২০১১–১২ মৌসুমে গড়ে ৪৫,১৩৪ জন দর্শক বুন্দেসলিগা উপভোগ করেছিল, যা উক্ত মৌসুমে যে কোন ধরনের খেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছিল (প্রথম ছিল মার্কিন ন্যাশনাল ফুটবল লিগ)।[২] বুন্দেসলিগা প্রায় ২০০টিরও অধিক দেশে টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়ে থাকে।[৩]

১৯৬২ সালে ডর্টমুন্ডে বুন্দেসলিগা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল[৪] এবং ১৯৬৩ সালে এই লিগের প্রথম মৌসুম আয়োজন করা হয়েছিল। জার্মানির অন্যান্য ফুটবল লিগের সাথে বুন্দেসলিগার সংস্থা এবং গঠন বারবার পরিবর্তন করা হয়েছে। বুন্দেসলিগা জার্মান ফুটবল এসোসিয়েশন (জার্মান: Deutscher Fußball-Bund) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমানে ডয়চে ফুসবল লিগা (জার্মান: Deutsche Fußball Liga) দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।

সারাংশ

বুন্দেসলিগা মূলত ২টি বিভাগ দ্বারা গঠিত; একটি হচ্ছে ১. বুন্দেসলিগা (যা কদাচিৎ প্রথম বুন্দেসলিগা নামেও পরিচিত) এবং অন্যটি হচ্ছে ২. বুন্দেসলিগা (যা কদাচিৎ দ্বিতীয় বুন্দেসলিগা নামেও পরিচিত)। ২. বুন্দেসলিগা ১৯৭৪ সাল থেকে জার্মান ফুটবলের দ্বিতীয় স্তরের লিগ হিসেবে আয়োজিত হচ্ছে। জার্মান শীর্ষ স্তরের ফুটবল লিগ দুটিকে একত্রে বুন্দেসলিগেন বলা হয়ে থাকে। ২০০৮ সাল থেকে ৩. লিগা (বা তৃতীয় লিগ) নামে জার্মানিতে আরেকটি পেশাদার লিগ আয়োজিত হচ্ছে; কিন্তু এটিকে বুন্দেসলিগেন হিসেবে উল্লেখ করা হয় না, কেননা এটি ডয়চে ফুসবল লিগার পরিবর্তে জার্মান ফুটবল এসোসিয়েশন (ডিএফবি) দ্বারা পরিচালিত হয়।

৩. লিগা পর থেকে সকল লিগগুলোকে আঞ্চলিক পর্যায়ের ভিত্তিতে উপ-বিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, রেগিওনাললিগা বর্তমানে নর্ড (উত্তর), নর্ডস্ট (উত্তর-পূর্ব) সুড (দক্ষিণ), সুডভেস্ট (দক্ষিণ-পশ্চিম) এবং পশ্চিম বিভাগে বিভক্ত রয়েছে। এরপর আরো ১৩টি বিভাগ রয়েছে, যার মধ্যে অধিকাংশই অবেরলিগা (বা উচ্চ লিগ) নামে পরিচিত, এগুলো ফেডারেল রাজ্য অথবা বৃহত্তর শহুরে এবং ভৌগোলিক অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। অবেরলিগার পরবর্তী লিগগুলো স্থানীয় অঞ্চলে বিভক্ত। এই লিগের গঠন ঘনঘন পরিবর্তন করা হয়ে থাকে এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অংশগ্রহণমূলক অবস্থাকে চিত্রায়িত করে থাকে। ১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে জার্মান পুনঃএকত্রীকরণের এর ফলে পরিবর্তন সাধিত হয় এবং পরবর্তীতে পশ্চিম জার্মানির জাতীয় লিগের সাথে একত্রীকরণ করা হয়।

উভয় বুন্দেসলিগেনে খেলা প্রতিটি দলের এই লিগে খেলার জন্য অবশ্যই একটি অনুমতিপত্র থাকতে হয়, নয়তো উক্ত দলকে আঞ্চলিক লিগে অবনমিত করা হয়। এই অনুমতিপত্র অর্জনের জন্য প্রত্যেক দলকে অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। অন্যান্য জাতীয় লিগের মতোই জার্মান শীর্ষ স্তরের লিগে খেলার কিছু উপকারিতা রয়েছে। সেগুলো হলো:

  • টেলিভিশন সম্প্রচারের অনুমতিপত্রের রাজস্বের বৃহত্তর অংশটি বুন্দেসলিগা দলের কোষাগারে যায়।
  • ১. বুন্দেসলিগার দলগুলো আরও বেশি ভক্তদের কাছে পরিচিত হতে পারে। প্রথম লিগে গড় উপস্থিতি প্রতি খেলায় ৪২,৬৭৩; যা ২. বুন্দেসলিগার গড় দ্বিগুণের চেয়ে বেশি।
  • টেলিভিশন এবং উচ্চতর উপস্থিতি স্তরের মাধ্যমে আরও বৃহত্তর অংশে ১. বুন্দেসলিগা দলগুলো সবচেয়ে লাভজনক পৃষ্ঠপোষকদের আকর্ষণ করতে সাহায্য করে।
  • ১. বুন্দেসলিগার দলগুলো তাদের দলের সাথে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো টেলিভিশন আয়, পৃষ্ঠপোষক এবং বিপণনের সংমিশ্রনের মাধ্যমে আর্থিকভাবে যথেষ্ট লাভবান হয়। এটি তাদের দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উৎস থেকে দক্ষ খেলোয়াড়দের আকর্ষণ, তাদের ধরে রাখতে এবং প্রথম শ্রেণির স্টেডিয়ামের সুবিধা তৈরি করতে সহায়তা করে।
২০১২ সালে বুন্দেসলিগার একটি ম্যাচে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের ভক্তগণ

অর্থনৈতিক দিক থেকে ১. বুন্দেসলিগা শক্তিশালী; ২. বুন্দেসলিগা নিজেদের বিবর্ধিত করার জন্য একই পথ অবলম্বন করা শুরু করেছে, যার ফলে পূর্বের তুলনায় ২. বুন্দেসলিগা সংস্থাগত এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে অধিক শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি পেশাগত খেলার দিক থেকেও উচ্চতর মানের লিগে পরিণত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিকভাবে সর্বাধিক পরিচিত জার্মান ফুটবল ক্লাবগুলো হলো: বায়ার্ন মিউনিখ, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড, শালকে ০৪, বরুসিয়া মনশেনগ্লাডবাখ, ভেয়ার্ডার ব্রেমেন এবং বায়ার লেভারকুজেন। হামবুর্গার এসভি একমাত্র ক্লাব হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৮ সালের ১২ই মে তারিখ পর্যন্ত টানা বুন্দেসলিগায় খেলেছে, উক্ত মৌসুমে এই ক্লাবটি তাদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় স্তরের লিগের অবনমিত হয়েছিল।

২০০৮–০৯ মৌসুমে, বুন্দেসলিগা উত্তরণ এবং অবনমনের জন্য পূর্বে প্রচলিত একটি জার্মান প্রযুক্তি প্রয়োগ করেছিল, যেটি ১৯৮১ সাল হতে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। উক্ত নিয়মটি হচ্ছে এই রূপ:

  • মৌসুম শেষে, বুন্দেসলিগার পয়েন্ট তালিকার নিচের দুই দল স্বয়ংক্রিয়ভাবে ২. বুন্দেসলিগায় অবনমিত হবে, অন্যদিকে ২. বুন্দেসলিগায় শীর্ষস্থান অর্জনকারী দুই দল ১. বুন্দেসলিগায় উন্নীত হবে।
  • মৌসুম শেষে, বুন্দেসলিগার পয়েন্ট তালিকার নিচের দিক হতে তৃতীয় দলটি ২. বুন্দেসলিগার পয়েন্ট তালিকায় তৃতীয় স্থান অর্জনকারী দলের সাথে একটি দুই-লেগের ম্যাচে অংশগ্রহণ করবে। উক্ত ম্যাচে বিজয়ী দল বুন্দেসলিগায় প্রবেশ করবে এবং পরাজিত দল ২. বুন্দেসলিগায় অংশগ্রহণ করবে।

১৯৯২ সাল হতে ২০০৮ সাল পর্যন্ত, একটি বিভিন্ন পদ্ধতি প্রচলিত ছিল, যার মাধ্যমে পয়েন্ট তালিকার নিচের দিকের তিনটি দল স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্বিতীয় স্তরে অবনমিত হয়ে যেত এবং উক্ত স্থানে ২. বুন্দেসলিগার শীর্ষ তিনটি দল উন্নীত হতো। ১৯৬৩ সাল হতে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দুইটি অথবা পরিশেষে তিনটি দল স্বয়ংক্রিয়ভাবে বুন্দেসলিগা হতে অবনমিত হতো এবং প্লে-অফের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে অথবা আংশিকরূপে উন্নত দল নির্ধারিত হতো

বুন্দেসলিগার মৌসুম প্রতিবছর আগস্ট মাসের শুরুর দিকে শুরু হয় এবং পরবর্তী বছরের মে মাসের শেষের দিকে সম্পন্ন হয়, যার মাঝে ছয় সপ্তাহের (মধ্য ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত) একটি শীতকালীন বিরতি থাকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অধিকাংশ খেলা শনিবার (পাঁচটি খেলা দুপুর ৩:৩০ মিনিটে এবং একটি খেলা সন্ধ্যা ৬:৩০ মিনিটে) এবং রবিবারে (একটি খেলা দুপুর ৩:৩০ মিনিটে এবং একটি খেলা বিকাল ৫:৩০টায় অনুষ্ঠিত) হয়ে থাকে। ২০০৬ সালে চুক্তিবদ্ধ একটি নতুন টেলিভিশন চুক্তির ফলে প্রতি শুক্রবার রাত ৮:৩০ মিনিটে একটি খেলা আয়োজন করা হয়ে থাকে।

ইতিহাস

১৯৬৩ সালে বুন্দেসলিগার প্রচলন হয়। এ পর্যন্ত ৫১টি ক্লাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন মৌসুমে অংশগ্রহণ করেছে। ঐ সময় থেকে এফসি বায়ার্ন মিউনিখ লিগে একচ্ছত্র প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। ইতিমধ্যে দলটি ২১ বার শিরোপা লাভ করেছে। অন্যান্য শিরোপাধারী দলের মধ্যে রয়েছে - বুরুসিয়া ডর্টমুন্ড, বুরুসিয়া মুনশেনগ্লাডবাখ, হামবুর্গ এসভি, ভ্যার্ডার ব্রেমেন, ভিএফবি স্টুটগার্ট, ভিএফএল ভল্ফসবুর্গ ইত্যাদি।

উয়েফার র‌্যাঙ্কিং পদ্ধতিতে বুন্দেসলিগা শীর্ষস্থানীয় জাতীয় লিগ হিসেবে তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে।[৫] ২০০৯ সালে এটি দ্বিতীয় স্থানে ছিল। দর্শক উপস্থিতির হারের দিক দিয়ে বিশ্বের অন্যান্য লিগের তুলনায় শীর্ষস্থানে রয়েছে। সকল ধরনের ক্রীড়ার তুলনায় ২০১১-১২ মৌসুমে লিগে বিশ্বের যে-কোন লিগে দ্বিতীয় সর্বাধিক গড়ে ৪৫,১৩৪ জন দর্শক-সমর্থক প্রতি খেলায় উপস্থিত ছিলেন।[২] টেলিভিশনের রূপালী পর্দায় বিশ্বের দুই শতাধিক দেশে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।[৬]

তথ্যসূত্র

  1. "UEFA Country Ranking 2019"kassiesa.home.xs4all.nl। Bert Kassies। n.d.। ১০ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১৯ 
  2. Cutler, Matt (১৫ জুন ২০১০)। "Bundesliga attendance reigns supreme despite decrease"। Sport Business। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০১২ 
  3. "TV BROADCASTERS WORLDWIDE"। ২০ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জানুয়ারি ২০১৩ 
  4. "History :: Bundesliga :: Leagues :: DFB – Deutscher Fußball-Bund e.V."dfb.de 
  5. "UEFA Country Ranking 2011"। সংগ্রহের তারিখ ৫ নভেম্বর ২০১১ 
  6. "TV BROADCASTERS WORLDWIDE"। ২০ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৩ 

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ