ব্যবহারকারী ইন্টারফেস

বাস্তব ব্যবহারকারী ইন্টারফেসের উদাহরণ

ব্যবহারকারী ইন্টারফেস (ইংরেজি: User Interface) হলো শিল্পসংক্রান্ত নকশায় মানব-মেশিন মিথস্ক্রিয়া ক্ষেত্রে একটি ব্যবস্থা যেখানে ব্যবহারকারী ও মেশিন পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া চালায়। এই মিথস্ক্রিয়ার উদ্দেশ্য হলো মেশিনের কার্যকর পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণ মানব পক্ষ থেকে যখন একই সময়ে মেশিন বিভিন্ন তথ্য দেখানোর মাধ্যমে কার্য পরিচালনায় সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। ব্যবহারকারী ইন্টারফেসের বিশাল ধারণার উদাহরণ হলো- কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম, হস্তচালিত যন্ত্রপাতি, ভারী যন্ত্রপাতি পরিচালনা নিয়ন্ত্রণ এবং প্রক্রিয়াকরণ নিয়ন্ত্রণ। নকশার বিষয়টি বিবেচ্য হয় যখন ব্যবহারকারী ইন্টারফেসটিতে শ্রমিকের কর্ম দক্ষতা এবং মনস্তাত্ত্বিক বিষয়াদি থাকে বা এগুলোর সাথে সম্পর্কিত হয়।

সাধারণত, ব্যবহারকারী ইন্টারফেসের নকশার উদ্দেশ্য হল একটি এমন ব্যবহারকারী ইন্টারফেস উৎপাদন করা যা ব্যবহার করতে গেলে আত্ম ব্যাখ্যাকারী, কার্যকর এবং উপভোগ্য (ব্যবহারকারী বান্ধব) এবং লক্ষ্য অর্জনের সহায়ক। এর মানে হলো পরিচালনাকারী ব্যক্তিকে কম ইনপুট দিতে হয় চাহিদাকৃত আউটপুট পাওয়ার জন্য এবং মেশিন মানুষ চায় না এমন আউটপুট কমায়।

ইউজার ইন্টারফেস একটি হিউম্যান মেশিন ইন্টারফেস (HMI) সহ এক বা একাধিক স্তর নিয়ে গঠিত হয়। সেখানে মেশিনে ইনপুট দেবার জন্য বাস্তবিক ইন্টারফেস মেশিনের কাজ হল দুরকম - ১. ইনপুট হার্ডওয়্যার যেমন: কীবোর্ড, মাউস, বা গেম প্যাড ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যবহারকারী নির্দেশ প্রদাণ করতে পারে এবং ২. আউটপুট হার্ডওয়্যার যেমন কম্পিউটার মনিটর, স্পিকার, এবং মুদ্রণযন্ত্র ইত্যাদির মাধ্যমে মেশিনের প্রসেসকৃত ডেটার ফলাফল মানুষ দেখতে পারে। যে যন্ত্র দিয়ে হিউম্যান মেশিন ইন্টারফেস (HMI) কার্যকর করা হয় তাকে হিউম্যান ইন্টারফেস ডিভাইস (HID) বলা হয়। মানুষ এবং মেশিন ইন্টারফেসের অপর নাম হল ম্যান-মেশিন ইন্টারফেস (MMI) এবং কম্পিউটার মেশিনের বেলায় ডাকা হয় হিউম্যান কম্পিউটার ইন্টারফেস। অতিরিক্ত ব্যবহারকারী ইন্টারফেস স্তর ব্যবহার করে এক বা একাধিক মানুষের ইন্দ্রীয় গ্রাহ্য যোগাযোগ মেশিনের সাথে করতে পারা যায়: স্পর্শ, চাক্ষুষ দর্শন (দৃষ্টিশক্তি), শ্রবণের মাধ্যমে (শব্দ), ঘ্রাণের মাধ্যমে (গন্ধ), স্থির বা সাম্য অবস্থার মাধ্যমে (ভারসাম্য) এবং স্বাদের মাধ্যমে।

প্রকার

  1. এটেন্টিভ ইউজার ইন্টারফেস - এই ইন্টারফেস ব্যবহারকারীর মনোযোগ আর্কষণে ব্যবহৃত হয়। কি ধরনের সর্তকতামূলক বার্তা প্রদান করা হবে, কতটুকু সর্তকতামূলক বার্তার বিস্তারিত থাকবে এবং কখন বার্তাগুলো ব্যবহারকারীকে দেয়া হবে ইত্যাদি।
  2. ব্যাচ ইন্টারফেস - এই ধরনের ইন্টারফেসগুলো ব্যবহারকারীর বার বার নির্দেশনার অপেক্ষা না করে কাজ করতে পারে। তবে প্রথমেই ব্যবহারকারীকে প্রত্যেকটি কার্যের মাত্রা নির্ধারন করে দিতে হয়। এরূপ কাজে সাধারণত ব্যাচ জব থাকে। প্রত্যেকটি জব ভিন্ন ভিন্ন ফাংশন এবং কমান্ডে কাজ করতে পারে। ব্যাচ জব নির্ধারন করে দিলে ব্যাচ প্রসেসিং শুরু হয় তখন আর ব্যবহারকারীকে কিছু করতে হয় না। সর্বশেষ প্রসেসিং শেষে ফলাফল দেখায়। এটি দীর্ঘ কাজের ক্ষেত্রে বা বেশি সময় লাগে এমন কাজের জন্য বা পুন পুন একই ধরনের কাজ করতে হয় এমন সব কাজের ক্ষেত্রে উপযোগী।
  3. কমান্ড-লাইন ইন্টারফেস (CLIs) - এটি সুনির্দিষ্ট কমান্ডভিত্তিক ইনপুট আউটপুট ব্যবস্থা। কিবোর্ডের মাধ্যমে কমান্ডগুলি লিখে দিতে হয় এবং ফলাফলগুলি একই ইন্টারফেসে লাইনের পর লাইন ধরে আসে। এ ধরনের ইন্টারফেস তারাই ব্যবহার করেন যারা বিশেষ ব্যবহারকারী। বিশেষত যারা প্রকৌশল, বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে কাজ করেন এবং প্রোগ্রামার ও সিস্টেম প্রশাসক ইত্যাদি। ব্যক্তিগত কম্পিউটারেও যে কেউ কমান্ড জানলে এটি ব্যবহার করতে পারেন।
  4. কথোপকথনমূলক ইন্টারফেস - এরূপ ইন্টারফেসের সাথে আমরা বর্তমানে বেশি পরিচিত যেমন মেসেজ আদান-প্রদান, চ্যাটিং ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে ভয়েস কমান্ড, চ্যাটবট এগুলোকে মানুষ সদৃশ ইন্টারফেস বলা হয়।[১]
  5. কথোপকথনমূলক ইন্টারফেস এজেন্ট - মানুষের বিকল্প হিসেবে এনিমেশন মানুষ, রোবট, ব্যক্তিগত এসিস্টেন্ট ইত্যাদি। এগুলো মানুষের কাছ থেকে কথোপকথনমূল ইন্টারফেসের মাধ্যমে কমান্ড গ্রহণ করে।
  6. ইশারাভিত্তিক ইন্টারফেস - হল গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস যেখানে হাতের বা মাউসের বা স্টাইলাসের ইশারায় ইনপুট প্রদান করা হয়।
  7. গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI) ইনপুট আউটপুট ডিভাসের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর সাথে মেশিনের ডেটা আদান প্রদান হয়। এক্ষেত্রে দুরকম ইন্টারফেস দেখা যায় অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড ব্যবহারকারী ইন্টারফেস এবং এপ্লিকেশন ওরিয়েন্টেড ইন্টারফেস।[২]
  8. হার্ডওয়্যার ইন্টারফেস - এরূপ ইন্টারফেস সর্বত্রই দেখতে পাওয়া যায়। এগুলো হল নব, বাটন, স্লাইডার, সুইচ এবং টাচস্ক্রীন ইত্যাদির মিশ্রণে তৈরি করা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। যেমন টোস্টার, কারের ড্যাসবোর্ড, বিমানের ককপিট ইত্যাদি।
  9. হলোগ্রাফিক ইন্টারফেস - স্পর্ষ ছাড়াই শুধুমাত্র বাতাসে হাত বুলিয়ে হলোগ্রাফিক যন্ত্রে ইনপুট দেয়ার একটি ব্যবস্থা।
  10. বুদ্ধিবৃত্তিক ইন্টারফেস - হল মানব-মেশিন ইন্টারফেস যা মানুষ এবং মেশিনের মধ্যকার মিথস্ক্রিয়াকে ব্যবহারকারীর মডেলের উপর ভিত্ত করে কাজ করে, পরিবেশন করে এবং কার্যকারণ পদ্ধতিতে মিথস্ক্রিয়ার উপযোগীতা, দক্ষতা ইত্যাদির উন্নতি করে।
  11. নড়াচড়া ধারণ ইন্টারফেস - ব্যবহারকারীর দেহের নড়াচড়া বুঝতে পারেন এবং সেই মত নির্দেশনা দিতে পারে। বর্তমানে এ্যাপল এটি নিয়ে গবেষণা করছে।[৩]
  12. মাল্টি স্ক্রীন ইন্টারফেস - বেশিরভাগ সময় বড় ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে, হ্যান্ডহেল্ড মার্কেটে এবং গেম খেলায় ব্যবহারকারীকে নমনীয় মিথস্ক্রিয়ার সুযোগ দেয়।
  13. ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ ইন্টারফেস সার্চ ইঞ্জিন এবং ওয়েব পেজে ব্যবহৃত ইন্টারফেস। ব্যবহারকারী কিছু খুজের এবং তার একটি প্রতিউত্তর পান।
  14. নন-কমান্ড ইন্টারফেস - কোন বিশদ কমান্ড নির্মান বা প্রদান না করেই যে ইন্টারফেস ব্যবহারকারীর প্রয়োজন ও ইচ্ছা মাফিক কাজ করে।[৪]
  15. স্পর্ষভিত্তিক ইন্টারফেস - সাধারণত গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস হয়। নির্দেশ প্রদানে ও ফলাফল গ্রহনে টাচপ্যাড বা টাচস্ক্রীন ব্যবহৃত হয়। এরূপ ব্যবস্থায় অতিরিক্ত হেপটিক ফিডব্যাক ব্যবস্থা থাকে সেটা ভাইব্রেশন বা শব্দ উভয়ই হতে পারে।
  16. ভয়েস ইন্টারফেস - কন্ঠ দিয়ে মেশিনে ইনপুট প্রদান করা হয়।

তথ্যসূত্র

  1. Errett, Joshua। "As app fatigue sets in, Toronto engineers move on to chatbots"CBC। CBC/Radio-Canada। জুন ২২, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৪, ২০১৬ 
  2. Lamb, Gordana (২০০১)। "Improve Your UI Design Process with Object-Oriented Techniques"Visual Basic Developer magazine। ২০১৩-০৮-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। Table 1. Differences between the traditional application-oriented and object-oriented approaches to UI design. 
  3. appleinsider.com ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০০৯-০৬-১৯ তারিখে
  4. Jakob Nielsen (এপ্রিল ১৯৯৩)। "Noncommand User Interfaces"। ACM Press: 83–99। ডিওআই:10.1145/255950.153582। ২০০৬-১১-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 

বহিঃসংযোগ