শরিফুল হক ডালিম
লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) শরিফুল হক ডালিম | |
---|---|
চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত[১][২] | |
কাজের মেয়াদ ১৯৭৬ – ১৯৮০ | |
রাষ্ট্রপতি | |
প্রধানমন্ত্রী | |
হংকংয়ে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার[১][২] | |
কাজের মেয়াদ ১৯৮২ – ১৯৮৮ | |
রাষ্ট্রপতি | |
প্রধানমন্ত্রী | |
কেনিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার[১][২] | |
কাজের মেয়াদ ১৯৮৮ – ১৯৯৫ | |
রাষ্ট্রপতি | |
প্রধানমন্ত্রী | |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ঢাকা, বেঙ্গল, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ) | ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৬
জাতীয়তা |
|
দাম্পত্য সঙ্গী | নিম্মি চৌধুরী (মৃ. ২০০৫) |
সন্তান | ১ |
পিতা | শামসুল হক |
যে জন্য পরিচিত | শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড |
পুরস্কার | বীর উত্তম[৩](বাতিল)[৪] |
অন্যান্য নাম | মেজর ডালিম |
সামরিক পরিষেবা | |
আনুগত্য | পাকিস্তান বাংলাদেশ |
শাখা | পাকিস্তান বিমানবাহিনী পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী |
কাজের মেয়াদ | ১৯৬৮–১৯৭৬ |
পদ | লেফটেন্যান্ট কর্নেল |
ইউনিট | আর্মার্ড কোর |
কমান্ড |
|
শরিফুল হক ডালিম (জন্ম: ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৬)[১] যিনি মেজর ডালিম নামে অধিক পরিচিত, হলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তা। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সাথে তিনি জড়িত ছিলেন।[৫][৬] শেখ মুজিব নিহত হবার পর মেজর ডালিম সেটি বাংলাদেশ বেতারে ঘোষণা দেন।[৭][৮][৯][১০] '৭৫ পরবর্তী গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার তাকে বিদেশে বিভিন্ন বাংলাদেশি দূতাবাসে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়।
কর্মজীবন
শরিফুল হক ডালিম প্রথমে ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পর তিনি বিমান বাহিনী থেকে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।[১১] ১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ সালের শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর তাকে সেনাবাহিনীতে পুনঃনিয়োগ করা হয় এবং লে. কর্ণেল পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। ১৯৭৬ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়োজিত হবার পর গণচীনে তাকে কূটনীতিক হিসাবে প্রেরণ করা হয়। ১৯৮০ সালে তিনি লন্ডন হাই কমিশনের সাথে যুক্ত হন। ১৯৮২ সালে কমিশনার হিসাবে হংকং-এর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রদূত হিসাবে কেনিয়ায় দায়িত্ব পালন করেন। একই সাথে তাকে তানজানিয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়। ইউনেপ (UNEP) এবং হেবিটাট (HABITAT)-এ বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসাবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। সোমালিয়ায় যুদ্ধকালীন সময়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর অংশ হিসাবে প্রেরিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সার্বিক তত্ত্বাবধানের বিশেষ দায়িত্বও তিনি পালন করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি সরকারি চাকুরি থেকে অবসর লাভ করেন।[১]
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে শরিফুল হক ডালিম পাকিস্তানে (তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান) ছিলেন। ২০শে এপ্রিল ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তান থেকে পালিয়ে ভারত আসেন এবং সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।[১১][১২] মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ সাহস ও কৃতিত্বের জন্য তিনি বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন। তবে ২০২১ সালের ৬ই জুন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় শরিফুল হক ডালিমসহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চারজনের মুক্তিযুদ্ধের খেতাব বাতিল করে।[৪]
শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ড
১৯৭৫-এ বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সাথে মেজর ডালিম সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।[৪][৮] মেজর সৈয়দ ফারুক রহমান, খন্দকার আবদুর রশিদ ও মেজর ডালিমসহ আরও কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা ১৯৭৫ সালে একটি সেনা অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন।[৫] ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ডালিমকে রাষ্ট্রপতি মুজিবকে হত্যা করতে নেতৃত্ব দিতে বলা হয় তবে ডালিম সেটি করতে অস্বীকার করেন।[৫] এরপর তাকে দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেনা-অভ্যুত্থান চলাকালে শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়। পরে ডালিম বাংলাদেশ বেতারের নিয়ন্ত্রণ নেন এবং একটি ঘোষণা দেন:
‘‘আমি মেজর ডালিম বলছি, খন্দকার মোশতাক আহমদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করিয়াছে। শেখ মুজিব ও তার খুনী-দুর্নীতিবাজ সরকারকে উৎখাত করা হইয়াছে। এখন থেকে সারা দেশে সামরিক আইন জারি করা হলো। আপনারা সবাই আমাদের সহযোগিতা করুন। আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন, কোনো অসুবিধা আপনাদের হইবে না। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ!’’[১৩]
শেখ মুজিব হত্যা মামলায় মেজর ডালিমকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে তিনি পলাতক আছেন।[৯][১৪]
জনসম্মুখে উপস্থিতি
শরিফুল হক ডালিম দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন। ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর, ২০২৫ সালের ৫ জানুয়ারি তিনি প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইনের ইউটিউব চ্যানেলে একটি লাইভ সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করেন।[১৫] সাক্ষাৎকারে ডালিম তার জীবন, সামসময়িক রাজনৈতিক বিষয় এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে তার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।[১৬][১৭][১৮][১৯] সাক্ষাৎকারটি ৮ লক্ষাধিক দর্শক সরাসরি দেখেন।[২০]
ব্যক্তিগত জীবন
ডালিম, নিম্মি চৌধুরীকে বিয়ে করেন এবং তাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।[২১] তার ছোট ভাই হলেন কামরুল হক স্বপন।[৭][২২]
গ্রন্থাবলি
- যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি (১৫ সেপ্টেম্বর ২০০১)
- আমি মেজর ডালিম বলছি (২০০২)
- কিছু কথা কিছু ব্যথা (১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০২)
তথ্যসূত্র
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "মেজর ডালিমের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট"। www.majordalimbubangla.com। ২০২৪-০৮-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭।
- ↑ ক খ গ "বিশ্লেষণ: হঠাৎ কোথা থেকে, কেন এলেন মেজর ডালিম"। নিউইয়র্ক সময়। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০২৫।
- ↑ ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত বাংলাদেশ সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত গেজেট, গেজেট নং-৮/২৫/ডি-১/৭২-১৩৭৮
- ↑ ক খ গ "বঙ্গবন্ধুর চার খুনির মুক্তিযুদ্ধের খেতাব বাতিল"। দৈনিক প্রথম আলো। ৬ জুন ২০২১। ১৯ আগস্ট ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ ক খ গ "বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সেনা কর্মকর্তাদের বয়ান"। দৈনিক জনকণ্ঠ। ২০২৪-০৮-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭।
- ↑ "বঙ্গবন্ধুর খুনি ডালিমের বাড়ি নিলামে বিক্রি | জাতীয়"। রাইজিংবিডি.কম। ২০১৭-০৭-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭।
- ↑ ক খ "এখনো সক্রিয় খুনি ডালিম!"। দৈনিক কালের কণ্ঠ। ২০১৬-০৮-১৫। ২০১৯-০৯-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭।
- ↑ ক খ "বঙ্গবন্ধু আত্মস্বীকৃত খুনি ডালিমের খেতাব এখনও বহাল!"। বিজনেস বাংলাদেশ। ২০২১-০১-১০। ২০২৪-০৮-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭।
- ↑ ক খ "বঙ্গবন্ধুর তিন খুনির খোঁজ নেই, দুজন কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে"। নিউজবাংলা ২৪। ২০২৪-০৮-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭।
- ↑ "বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত"। ডিবিসি নিউজ (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০৮-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭।
- ↑ ক খ "মেজর ডালিমের ওয়েবসাইট"। ১৮ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৬২। আইএসবিএন 9789849025375।
- ↑ "সেদিন ঢাকা বেতারে যা ঘটেছিলো"। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ১৫ আগস্ট ২০২১। ১৭ আগস্ট ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব হত্যা"। প্রথম আলো। ১৪ আগস্ট ২০১৮। ২৭ আগস্ট ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৮।
- ↑ ইলিয়াস হোসাইন (৫ জানুয়ারি ২০২৫)। "৫০ বছরের সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর ডালিম (বীর উত্তম)"। ইউটিউব। ৫ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০২৫।
- ↑ "লাইভ সাক্ষাৎকারে মেজর ডালিম কী বললেন?"। দৈনিক জনকণ্ঠ। ৫ জানুয়ারি ২০২৫। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০২৫।
- ↑ "মেজর ডালিমের বক্তব্যে জাতীয় রাজনীতি"। দৈনিক জনকণ্ঠ। ৫ জানুয়ারি ২০২৫। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০২৫।
- ↑ "বিপ্লবী ছাত্রদের প্রশংসা করলেন মেজর ডালিম"। দৈনিক ইনকিলাব। ৫ জানুয়ারি ২০২৫। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০২৫।
- ↑ "মেজর ডালিমের সাক্ষাৎকার: নতুন প্রজন্মের প্রতি বার্তা"। দৈনিক জনকণ্ঠ। ৫ জানুয়ারি ২০২৫। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০২৫।
- ↑ "ইউটিউবে রেকর্ড গড়ল মেজর ডালিমের সাক্ষাৎকার"। দৈনিক জনকণ্ঠ। ২০২৫-০১-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০১-০৮।
- ↑ "সমশের মুবিন সফিউল্লাহ'র দিকে বেল্ট ছুড়ে দিয়ে বললেন..."। মানবজমিন। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০। ২৭ আগস্ট ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "আবার ঢাকায়"। ২৭ আগস্ট ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০২৪।
বহিঃসংযোগ
- উইকিউক্তিতে শরিফুল হক ডালিম সম্পর্কিত উক্তি পড়ুন।
- উইকিমিডিয়া কমন্সে শরিফুল হক ডালিম সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।
- মেজর ডালিমের ওয়েবসাইট