শিশুমৃত্যু
শিশুমৃত্যু (ইংরেজি: child mortality) বলতে অনূর্ধ্ব ৫-বছর বয়সী শিশুদের মৃত্যুকে বোঝায়।[২] শিশুমৃত্যুর হার (বা অনূর্ধ্ব-পাঁচ মৃত্যুহার) বলতে ১,০০০টি জ্যান্ত শিশুর মধ্যে জন্ম থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত মৃত্যুর সম্ভাবনাকে বোঝায়।[৩]
শিশুমৃত্যুর মধ্যে পেরিনেটাল মৃত্যু (জন্মের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যু), নবজাতকের মৃত্যু (জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে মৃত্যু) ও বাচ্চার মৃত্যু (জন্মের প্রথম বছরের মধ্যে মৃত্যু) অন্তর্গত।[৩]
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মাধ্যমে শিশুমৃত্যু হ্রাস প্রতিফলিত হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ৩.২ অনুযায়ী, "২০৩০ সালের মধ্যে নবজাতক ও অনূর্ধ্ব ৫-বছর বয়সী শিশুর প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু বন্ধের পাশাপাশি সকল দেশের লক্ষ্য হবে প্রতি ১,০০০ জীবিত জন্মে নবজাতকের মৃত্যুহার কমপক্ষে ১২-তে এবং প্রতি ১,০০০ জীবিতজন্মে অনূর্ধ্ব ৫-বয়সী শিশুমৃত্যুর হার কমপক্ষে ২৫ এ নামিয়ে আনা"।[৪]
বিগত ৪০ বছরে শিশুমৃত্যুর হার কমে গিয়েছে। দ্রুত প্রগতির ফলে ১৯৯০ সাল থেকে প্রতিরোধযোগ্য শিশুমৃত্যু যথেষ্ট পরিমাণে কমে গিয়েছে, আর ১৯৯০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে অনূর্ধ্ব ৫-বছর বয়সীদের মৃত্যুহার অর্ধেকের বেশি কমে গিয়েছে।[৩] ১৯৯০ সালে ১ কোটি ২৬ লাখ অনূর্ধ্ব ৫-বছর বয়সীদের মৃত্যু হয়েছিল, যা ২০১৬ সালে কমে ৫৬ লাখ এবং ২০২০ সালে কমে ৫০ লাখে দাঁড়াল।[৩] উন্নতির সত্ত্বেও এখনও মূলত প্রতিরোধযোগ্য কারণে প্রতিদিন ১,৫০০ জন অনূর্ধ্ব ৫-বছর বয়সীদের মৃত্যু হয়,[৩] যার প্রায় ৮০ শতাংশই দক্ষিণ এশিয়া ও সাহারা-নিম্ন আফ্রিকায় ঘটে। কেবল ৬টি দেশ সমস্ত শিশুমৃত্যুর অর্ধেকের জন্য দায়ী: ইথিওপিয়া, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, চীন, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও ভারত।[৩] শিশুমৃত্যুর ৪৫ শতাংশের বয়স অনূর্ধ্ব ২৮ দিন।[৫] শিশুদের মৃত্যুর মধ্যে অনূর্ধ্ব ১-বছর বয়সীদের মৃত্যু সর্বোচ্চ, যার পরে আছে ১৫ থেকে ১৯-বছর বয়সী, ১ থেকে ৪-বছর বয়সী এবং ৫ থেকে ১৪-বছর বয়সীদের মৃত্যু।[৬][৭][৮]
প্রকারভেদ
শিশুমৃত্যুর বিভিন্ন প্রকারভদ আছে:
- পেরিনেটাল মৃত্যু: জন্মের এক সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যু।[৯]
- নবজাতকের মৃত্যু: জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে মৃত্যু।[৯]
- বাচ্চার মৃত্যু: জন্মের এক বছরের মধ্যে মৃত্যু।[৯]
- অনূর্ধ্ব ৫-বছর বয়সীর মৃত্যু: জন্মের পাঁচ বছরের মধ্যে মৃত্যু।[৯]
কারণ
অনূর্ধ্ব ৫-বছর বয়সীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে:
- অপরিণত জন্মের ফলে জটিলতা (১৮%)
- নিউমোনিয়া (১৬%)
- ইন্টারপার্টাম-সম্পর্কিত ঘটনা (১২%)
- উদরাময় (৮%)
- নবজাতকের জীবাণুদূষণ (৭%)
- ম্যালেরিয়া (৫%)
- অপুষ্টি (৩৪%)
রোগবিস্তার
বৈচিত্র্য
শিশুমৃত্যুর হারের মধ্যে বৈচিত্র্য় যথেষ্ট রয়েছে। বৈশ্বিকভাবে যে দেশে শিশুমৃত্যুর হার সর্বোচ্চ সেখানে কোনো শিশুর মৃত্যুর সম্ভাবনা যে দেশে শিশুমৃত্যুর হার সর্বনিম্ন তার তুলনায় ৬০ গুণ বেশি।[৩] পৃথিবীর মধ্যে সাহারা-নিম্ন আফ্রিকায় শিশুমৃত্যুর হার সর্বোচ্চ। যে ছয়টি দেশে প্রতি ১,০০০টি জ্যান্ত শিশুর মধ্যে ১০০টি মৃত্যু হয় তার সবকটাই সাহারা-নিম্ন আফ্রিকায়, যার মধ্যে সোমালিয়ায় শিশুমৃত্যু সর্বোচ্চ।[৩]
এছাড়া কেবল দুটি অঞ্চল শিশুমৃত্যুর ৮০ শতাংশের জন্য দায়ী: সাহারা-নিম্ন আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়া।[৩] ছয়টি দেশ বিশ্বজুড়ে শিশুমৃত্যুর অর্ধেকের জন্য দায়ী: ইথিওপিয়া, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, চীন, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও ভারত।[৩] নাইজেরিয়া ও ভারত বিশ্বজুড়ে শিশুমৃত্যুর প্রায় এক-তৃতীয়াংশের (৩২%) জন্য দায়ী।[৩] নিম্ন ও মধ্য আয়ের রাষ্ট্রে প্রশাসনিক বিভাগ-ভেদে শিশুমৃত্যুর হারের যথেষ্ট তারতম্য রয়েছে।[১০][১১]
কোভিড-১৯
২০২০ সালে কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারী চলাকালীন অন্যান্য মৃত্যুর তুলনায় শিশুমৃত্যু কমে গিয়েছিল। বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর মধ্যে শিশুমৃত্যু সর্বনিম্ন ছিল। প্রায় ৩৭ লাখ মৃত্যুর মধ্যে ০.৪ শতাংশ ছিল অনূর্ধ্ব ২০-বছর বয়সী কিশোর-কিশোরী, অর্থাৎ কৈশোরে ১৩,৪০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এই ক্ষুদ্র অনুপাতের মধ্যে ৪২% ছিল অনূর্ধ্ব ৯-বছর বয়সী শিশু।[১২]
তথ্যসূত্র
- ↑ "Child mortality"। আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটা। ২০২২-০৯-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "WHO Child mortality and causes of death"। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এপ্রিল ২৯, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-২৬।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট "Under-five mortality"। ইউনিসেফ। ডিসেম্বর ২০২১। ১ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-২৬।
- ↑ "Sustainable Development Goal 3: সুস্বাস্থ্য ও সামগ্রিক কল্যাণ"। জাতিসংঘ বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০১-২৪।
- ↑ Liu, Li; Oza, Shefali; Hogan, Dan; Chu, Yue; Perin, Jamie; Zhu, Jun; ও অন্যান্য (ডিসেম্বর ২০১৬)। "Global, regional, and national causes of under-5 mortality in 2000–15: an updated systematic analysis with implications for the Sustainable Development Goals"। দ্য ল্যানসেট (ইংরেজি ভাষায়)। 388 (10063): 3027–3035। ডিওআই:10.1016/S0140-6736(16)31593-8। পিএমআইডি 27839855। পিএমসি 5161777 । অজানা প্যারামিটার
|name-list-style=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ "Infant, Child, and Teen Mortality"। Child Trends। ৩০ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "A Snapshot of Civil Registration in Sub-Saharan Africa" (পিডিএফ)। ইউনিসেফ। ২০১৭-১২-০৫। ২১ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১৮।
- ↑ "A Child is a Child: Protecting children on the move from violence, abuse and exploitation" (পিডিএফ)। ইউনিসেফ। ২০১৭-০৫-১৮। ১ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১৮।
- ↑ ক খ গ ঘ Weeks, John Robert (২০১৫-০১-০১)। Population: an introduction to concepts and issues (Twelfth সংস্করণ)। Boston, MA: Cengage Learning। আইএসবিএন 978-1-305-09450-5। ওসিএলসি 884617656। অজানা প্যারামিটার
|name-list-style=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ Golding, Nick; Burstein, Roy; Longbottom, Joshua; Browne, Annie J; Fullman, Nancy; Osgood-Zimmerman, Aaron; ও অন্যান্য (২০১৭-১১-১১)। "Mapping under-5 and neonatal mortality in Africa, 2000–15: a baseline analysis for the Sustainable Development Goals"। Lancet (ইংরেজি ভাষায়)। 390 (10108): 2171–2182। আইএসএসএন 0140-6736। ডিওআই:10.1016/S0140-6736(17)31758-0। পিএমআইডি 28958464। পিএমসি 5687451 । অজানা প্যারামিটার
|name-list-style=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ Burstein R, Henry NJ, Collison ML, Marczak LB, Sligar A, Watson S, ও অন্যান্য (অক্টোবর ২০১৯)। "Mapping 123 million neonatal, infant and child deaths between 2000 and 2017"। Nature। 574 (7778): 353–358। ডিওআই:10.1038/s41586-019-1545-0। পিএমআইডি 31619795। পিএমসি 6800389 । বিবকোড:2019Natur.574..353B।
- ↑ "Child mortality and COVID-19"। ইউনিসেফ (ইংরেজি ভাষায়)। ১ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-০৫।