সাবঅ্যারাকনয়েড রক্তক্ষরণ
সাবঅ্যারাকনয়েড রক্তক্ষরণ | |
---|---|
প্রতিশব্দ | Subarachnoid haemorrhage |
![]() | |
মস্তিষ্কের সিটি স্ক্যানে ছবিতে মাঝে সাদা অংশে সাবঅ্যারাকনয়েড রক্তক্ষরণ নির্দেশ করছে দুই পাশেই বিস্তৃত হয়েছে (তীর চিহ্নিত) | |
উচ্চারণ | |
বিশেষত্ব | নিউরোসার্জারি |
লক্ষণ | হওয়ার সাথে সাথে মাথায় কিল দেওয়ার মতো মাথাব্যথা, বমি করা, চেতনার মাত্রা হ্রাস পাওয়া[১] |
জটিলতা | দেরিতে সেরিব্রাল ইশ্চেমিয়া, সেরিব্রাল ভেসোস্পাজম, খিঁচুনি[১] |
প্রকারভেদ | দুর্ঘটনাজনিত, হঠাৎ করে (অ্যানিউরিজমের কারণে, অ্যানিউরিজম ছাড়া, পেরিমেসেনসেফ্যালিক)[১] |
কারণ | মাথার জখম, সেরিব্রাল অ্যানিউরিজম[১] |
ঝুঁকির কারণ | উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, মদ্যাসক্তি, কোকেইন[১] |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | সিটি স্ক্যান, লাম্বার পাংচার[২] |
পার্থক্যমূলক রোগনির্ণয় | মেনিনজাইটিস, মাইগ্রেন, সেরিব্রাল ভেনার সাইনাস থ্রম্বোসিস[৩] |
চিকিৎসা | নিউরোসার্জারি বা ইন্টারভেনশনাল রেডিওলজি[১] |
ঔষধ | ল্যাবেটালোল, নাইমোডিপাইন[১] |
আরোগ্যসম্ভাবনা | অ্যানিউরিজমের কারণে হলে ৪৫% ক্ষেত্রে ১ মাসের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে[১] |
সংঘটনের হার | ১০,০০০ জনে ১ জন[১] |
সাবঅ্যারাকনয়েড রক্তক্ষরণ (ইংরেজি: Subarachnoid hemorrhage) বা এসএএইচ হচ্ছে মস্তিষ্কের সাবঅ্যারাকনয়েড অংশে সৃষ্ট রক্তক্ষরণ। মস্তিষ্ক ঘিরে থাকা মেনিনজেস আবরণীর সাবঅ্যারাকনয়েড ঝিল্লী ও পিয়া ম্যাটারের মধ্যবর্তী অংশকে সাবঅ্যারাকনয়েড অংশ বলা হয়।[১] এ ধরনের রক্তক্ষরণের প্রাথমিক লক্ষণের মধ্যে রয়েছে হঠাৎ করে সৃষ্ট তীব্র মাথাব্যথা, বমি হওয়া, চেতনার মাত্রা হ্রাস পাওয়া, জ্বর, এবং কিছু ক্ষেত্রে খিঁচুনি।[১] ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া বা ঘাড়ে ব্যথা হওয়াও তুলামূলকভাবে সাধারণ একটি লক্ষণ।[২] আক্রান্ত রোগীদের চার ভাগের এক ভাগের ক্ষেত্রে বড়ো ধরনের রক্তক্ষরণের এক মাসের মধ্যে লক্ষণ নিশ্চিতকারী তুলনামূলকভাবে ছোট ধরনের রক্তক্ষরণ হতে দেখা যায়।
মাথার জখমের ফলে বা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাবঅ্যারাকনয়েড রক্তক্ষরণের সৃষ্টি হতে পারে যা সাধারণত ফেটে যাওয়া সেরিব্রাল অ্যানিউরিজমের কারণে হয়।[১] স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৃষ্ট রক্তক্ষরণের ঝুঁকির কারণের মধ্যে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, পারিবারিক ইতিহাস, মদ্যাসক্তি, এবং কোকেইন আসক্তি।[১] সাধারণত প্রাথমিক লক্ষণ দেখার ছয় ঘণ্টার মধ্যে মাথার সিটি স্ক্যান করার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব।[৪] মাঝে-মধ্যে রোগ নির্ণয়ের জন্য লাম্বার পাংচারের আশ্রয় নেওয়ারও প্রয়োজন পড়তে পারে।[৪] নিশ্চিত হওয়ার পর রক্তক্ষরণ সৃষ্টির কারণ নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে সাধারণত অন্যান্য আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
রোগনির্ণয় করার পর দ্রুততার সাথে নিউরোসার্জারি বা তেজষ্ক্রিয়ভাবে পরিচালিত হস্তক্ষেপমূলক অস্ত্রোপচার করার মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু হয়।[১] শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে সৃষ্ট ক্ষতি নিরসনের আগ পর্যন্ত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ল্যাবেটেলোল ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করা যায়।[১] রোগীর দেহের তাপমাত্রা বেশি থাকলে জ্বর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাও করা উচিত।[১] ভ্যাসোস্পাজম দূর করতে নাইমোডিপাইন নামক ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার প্রায়শ-ই ব্যবহার করা হয়।[১] পরবর্তী সময়ে খিঁচুনি রোধে নিয়মিত ওষুধ গ্রহণে কার্যকর ফলাফল পাওয়ার পরিষ্কার নিশ্চয়তা নেই।[১] অ্যানিউরিজমের কারণে সৃষ্ট সাবঅ্যারাকনয়েড রক্তক্ষরণে আক্রান্তদের প্রায় অর্ধেক আক্রান্ত হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যেই মারা যান এবং বেঁচে থাকা রোগীদের এক-তৃতীয়াংশ পরবর্তীতে নানাবিধ জটিলতার মধ্যে জীবনযাপন করেন।[১] আক্রান্ত রোগীদের শতকরা ১০–১৫ ভাগ হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মৃত্যুবরণ করেন।[৫]
প্রতি বছর গড়ে দশ হাজার জনে এক জন স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৃষ্ট সাবঅ্যারাকনয়েড রক্তক্ষরণের স্বীকার হন।[১] পুরুষের তুলনায় নারীরাই এতে বেশি আক্রান্ত হন।[১] যদিও বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর ঝুঁকিও বাড়তে থাকে, তারপরেও ৫০% ক্ষেত্রে আক্রান্ত রোগীর বয়স ৫৫ বছরের নিচে।[৬] এটি এক ধরনের স্ট্রোক এবং সব ধরনের স্ট্রোকের মধ্যে এর পরিমাণ প্রায় ৫%।[৬] অ্যানিউরিজমের প্রতিকারের জন্য শল্যচিকিৎসা শুরু হয়েছিলো ১৯৩০-এর দশকে।[৭] তবে ১৯৯০-এর দশক থেকে অনেক ধরনের অ্যানিউরিজম এন্ডোভাসকুলার কয়েলিং পদ্ধতিতে নিরাময় করা হয় যা সাধারণ নিউরোসার্জারির চেয়ে তুলনামূলকাবে অনেক কম ঝামেলাপূর্ণ, আগ্রাসী, ও নিরাপদ একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে শরীরের বড় কোনো রক্তবাহিকার মাধ্যমে অ্যানিউরিজমে আক্রান্ত স্থানে পৌঁছানো সম্ভব হয়।[৮]
তথ্যসূত্র
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত থ দ ধ ন প Abraham, MK; Chang, WW (নভেম্বর ২০১৬)। "Subarachnoid Hemorrhage."। Emergency Medicine Clinics of North America। 34 (4): 901–916। ডিওআই:10.1016/j.emc.2016.06.011। পিএমআইডি 27741994।
- ↑ ক খ Carpenter, CR; Hussain, AM; Ward, MJ; Zipfel, GJ; Fowler, S; Pines, JM; Sivilotti, ML (সেপ্টেম্বর ২০১৬)। "Spontaneous Subarachnoid Hemorrhage: A Systematic Review and Meta-analysis Describing the Diagnostic Accuracy of History, Physical Examination, Imaging, and Lumbar Puncture With an Exploration of Test Thresholds."। Academic Emergency Medicine। 23 (9): 963–1003। ডিওআই:10.1111/acem.12984। পিএমআইডি 27306497। পিএমসি 5018921
।
- ↑ Longmore, Murray; Ian Wilkinson; Tom Turmezei; Chee Kay Cheung (২০০৭)। Oxford Handbook of Clinical Medicine, 7th edition। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 841। আইএসবিএন 978-0-19-856837-7।
- ↑ ক খ Carpenter, CR; Hussain, AM; Ward, MJ; Zipfel, GJ; Fowler, S; Pines, JM; Sivilotti, ML (সেপ্টেম্বর ২০১৬)। "Spontaneous Subarachnoid Hemorrhage: A Systematic Review and Meta-analysis Describing the Diagnostic Accuracy of History, Physical Examination, Imaging, and Lumbar Puncture With an Exploration of Test Thresholds."। Academic Emergency Medicine। 23 (9): 963–1003। ডিওআই:10.1111/acem.12984। পিএমআইডি 27306497। পিএমসি 5018921
।
- ↑ van Gijn J, Kerr RS, Rinkel GJ (২০০৭)। "Subarachnoid haemorrhage": 306–18। ডিওআই:10.1016/S0140-6736(07)60153-6। পিএমআইডি 17258671।
- ↑ ক খ van Gijn J, Kerr RS, Rinkel GJ (২০০৭)। "Subarachnoid haemorrhage"। Lancet। 369 (9558): 306–18। ডিওআই:10.1016/S0140-6736(07)60153-6। পিএমআইডি 17258671।
- ↑ Todd NV, Howie JE, Miller JD (জুন ১৯৯০)। "Norman Dott's contribution to aneurysm surgery"। Journal of Neurology, Neurosurgery, and Psychiatry। 53 (6): 455–58। ডিওআই:10.1136/jnnp.53.6.455। পিএমআইডি 2199609। পিএমসি 1014202
।
- ↑ Strother CM (১ মে ২০০১)। "Historical perspective. Electrothrombosis of saccular aneurysms via endovascular approach: part 1 and part 2": 1010–12। পিএমআইডি 11337350। ১৪ নভেম্বর ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
বহিঃসংযোগ

শ্রেণীবিন্যাস | |
---|---|
বহিঃস্থ তথ্যসংস্থান |