হেনরি ক্রিস্টিয়ান হ্যারি হপম্যান, সিবিই (জন্ম: ১২ আগস্ট, ১৯০৬ - মৃত্যু: ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৮৫) সিডনির গ্লেবে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বখ্যাত টেনিস তারকা ও কোচ ছিলেন। ১৯৮৯ সালে তার সম্মানার্থে হপম্যান কাপ টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপের নামকরণ করা হয়েছে। তিনি অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ১৯৩৮ থেকে ১৯৬৯ সময়কালে ১৫বার ডেভিস কাপের শিরোপা লাভ করেছিলেন। পরবর্তীকালে কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন হ্যারি হপম্যান।
প্রারম্ভিক জীবন
জন হেনরি হপম্যান ও জেনি সিবারটিন দম্পতির তৃতীয় সন্তান ছিলেন হ্যারি হপম্যান। ১৩ বছর বয়সে টেনিসে তার হাতেখড়ি ঘটে। রোজহিল পাবলিক স্কুল মাঠের কোর্টে এককের প্রতিযোগিতায় তিনি শিরোপা পান।
নিউ সাউথ ওয়েলসের গ্লেব এলাকায় জন্মগ্রহণ করলেও পরবর্তীকালে তার পরিবার পারমত্মা এলাকায় স্থানান্তরিত হন। রোজহিল পাবলিক প্রাইমারী স্কুলে অধ্যয়ন করেন। ঐ বিদ্যালয়েই তার বাবা প্রধানশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন।[১] এরপর পারমত্মা হাই স্কুলে ভর্তি হন। সেখানেই তিনি টেনিস ও ক্রিকেট খেলায় জড়িয়ে পড়েন।
খেলোয়াড়ী জীবন
১৯৩৯ থেকে ১৯৬৭ সময়কালে তিনি ২২বার অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ডেভিস কাপে অধিনায়ক-কোচ হিসেবে সফলভাবে অংশগ্রহণ করেন। তন্মধ্যে, ১৬বার তার দল শিরোপা লাভে সক্ষমতা দেখায়। তার সাথে ফ্রাঙ্ক সেজম্যান, কেন ম্যাকগ্রিগর, লিউ হোড, কেন রোজওয়াল, রড লেভার, নিল ফ্রেজার, জন নিউকম্ব, ফ্রেড স্টোল, টনি রোচ, রয় ইমারসন, অ্যাশলে কুপার, রেক্স হার্টউইগ, মারভিন রোজ ও মেল অ্যান্ডারসন অংশ নিয়েছিলেন।
অবসর
১৯৫১ সালের শেষদিকে ফ্রাঙ্ক সেজম্যান পেশাদারী টেনিসের দিকে ধাবিত হলে হপম্যান মেলবোর্ন হেরাল্ডে তার সাহায্যার্থে কলাম লেখেন। প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের পর সেজম্যানের স্ত্রীর নামে একটি গ্যাসোলিন স্টেশন ক্রয় করা হয়।[২] ফলে, সেজম্যান আরও এক বছর শৌখিন খেলোয়াড় হিসেবে টেনিসে অংশগ্রহণ করেছিলেন। জো ম্যাককলি তার ‘পেশাদার টেনিসের ইতিহাস’ গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে লিখেছিলেন যে, কিছু কারণে বিশেষ করে খেলায় আর্থিক বিষয়ে হপম্যান প্রবল বিরুদ্ধবাদী ছিলেন।[৩]
১৯৩৩ সালে মেলবোর্ন হেরাল্ডের ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে যোগদান করেন। এছাড়াও ক্রীড়া ভাষ্যকারের ভূমিকায়ও অবতীর্ণ হয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি টেনিস প্রশিক্ষণের দিকে মনোনিবেশ ঘটান।
হপম্যান কাপ তার সম্মানার্থে নামাঙ্কিত করা হয়। তার বিধবা পত্নী লুসি হপম্যান প্রতিবছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতায় পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থে যান। এ দম্পতির কোন সন্তানাদি ছিল না। ১৯৭৮ সালে রোড আইল্যান্ডের নিউপোর্টে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক টেনিস হল অব ফেমে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ব্যক্তিগত জীবন
হপম্যান চারবারের মিশ্র দ্বৈতের শিরোপা বিজয়ী নেল হলকে বিয়ে করেন। ১৯ মার্চ, ১৯৩৪ তারিখে সিডনির সেন্ট ফিলিপ’স অ্যাংলিকান চার্চে তাদের বিয়ের আয়োজন করা হয়। ১০ জানুয়ারি, ১৯৬৮ তারিখে টিউমারে তার দেহাবসান ঘটলে ১৯৬৯ সাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।[৪] সেখানে পোর্ট ওয়াসিংটন টেনিস একাডেমিতে পেশাদার কোচ হিসেবে সাফল্য লাভ করেন। ঐ একাডেমি থেকেই ভিতাস গেরুলাইতিস, জন ম্যাকেনরো’র ন্যায় ভবিষ্যতের টেনিস তারকা বের হয়ে আসেন। ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১ তারিখে লুসি পোপ ফক্সের সাথে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তাকে নিয়ে ফ্লোরিডার লার্গো এলাকায় হপম্যান টেনিস একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন।
টেনিস ইতিহাসবিদের মতে, হপম্যান জুয়ারী ছিলেন যিনি নিজ স্বপ্ন পূরণার্থে জমি বিক্রি করতে দ্বিধাবোধ করতেন না।[৫] ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে হৃদজনিত কারণে তার দেহাবসান ঘটে।