রাশিয়ার গৃহযুদ্ধ
রাশিয়ার গৃহযুদ্ধ (রুশ: Гражда́нская война́ в Росси́и, উচ্চারণ: গ্রাঝদানস্কায়া ভয়না ভে রোসসি; ৭ নভেম্বর ১৯১৭ – ২৫ অক্টোবর ১৯২২)[৪] ছিল প্রাক্তন রুশ সাম্রাজ্যে ১৯১৭ সালে সংঘটিত দুইটি বিপ্লবের পরবর্তীকালে রাশিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন দলের মধ্যে লড়াই। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় দুইটি দলের একটি ছিল ভ্লাদিমির লেনিনের নেতৃত্বাধীন বলশেভিক ধাঁচের সমাজতন্ত্রের সমর্থক লাল ফৌজ এবং আরেকটি ছিল শ্বেত ফৌজ, যেটি ছিল রাজতন্ত্র, পুঁজিবাদ ও অন্যান্য ধাঁচের সমাজতন্ত্রের সমর্থকদের একটি জোট। এর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী উগ্র সমাজতন্ত্রী দল এবং অনাদর্শিক সবুজ সৈন্যবাহিনীসমূহ বলশেভিক ও শ্বেত ফৌজ উভয়ের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করে। আটটি বিদেশি রাষ্ট্র লাল ফৌজের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে, যাদের মধ্যে ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মিত্রশক্তি এবং কিছু জার্মানপন্থী সৈন্যদল[৫]। লাল ফৌজ ক্রমান্বয়ে ১৯১৯ সালে ইউক্রেনে দক্ষিণ রাশিয়ার সশস্ত্রবাহিনীকে এবং পূর্বে সাইবেরিয়ায় অ্যাডমিরাল আলেকসান্দর কোলচাকের নেতৃত্বাধীন সৈন্য্যবাহিনীকে পরাজিত করে। পিওতর ভ্রাঙ্গেলের নেতৃত্বাধীন শ্বেত ফৌজের অবশিষ্টাংশ ১৯২০ সালে ক্রাইমিয়ায় পরাজিত হয় এবং রাশিয়া থেকে পশ্চাৎপসরণ করে। দূরবর্তী অঞ্চলগুলোতে আরো দুই বছর ধরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যুদ্ধ চলে, এবং ১৯২৩ সাল পর্যন্ত দূরপ্রাচ্যে শ্বেত ফৌজের অবশিষ্টাংশের সঙ্গে ছোট ছোট সংঘর্ষ চলতে থাকে। ১৯২৩ সালে নবগঠিত সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর বলশেভিকদের সুনিশ্চিত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা লাভের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের অবসান ঘটে, যদিও ১৯৩৪ সালের আগে মধ্য এশিয়ার সশস্ত্র জাতীয় আন্দোলনকে পুরোপুরি দমন করা সম্ভব হয় নি। এই যুদ্ধে ৭০ লক্ষ থেকে ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায়, যাদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক জনগণ। রাশিয়ার গৃহযুদ্ধকে ইউরোপের ইতিহাসের তখন পর্যন্ত সংঘটিত বৃহত্তম জাতীয় বিপর্যয় হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়[৬]।
পটভূমি
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
রুশ বিপ্লব
লাল ফৌজ গঠন
১৯১৭ সালের মাঝামাঝি থেকে রুশ সৈন্যবাহিনী ভেঙে পড়তে শুরু করে[৭]। বলশেভিকরা স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা গঠিত লাল রক্ষীবাহিনীকে তাদের মূল সৈন্যদল হিসেবে ব্যবহার করে। বলশেভিক রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থা চেকার একটি সশস্ত্র সামরিক ইউনিট এদেরকে সহায়তা করতে। ১৯১৮ সালের জানুয়ারিতে যুদ্ধে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটার পর লিওন ত্রতস্কি (পরবর্তীতে সোভিয়েত রাশিয়ার সামরিক ও নৌবাহিনী বিষয়ক জনকমিশার) একটি অধিক কার্যকরী সৈন্যবাহিনী তৈরির উদ্দেশ্যে লাল রক্ষীবাহিনীকে 'শ্রমিক ও কৃষকদের লাল ফৌজ' হিসেবে পুনর্গঠিত করেন। সৈন্যদের মনোবল বৃদ্ধি এবং আনুগত্য নিশ্চিত করার জন্য বলশেভিকরা লাল ফৌজের প্রতিটি ইউনিটে রাজনৈতিক কমিশার নিযুক্ত করে।
বলশেভিকবিরোধী আন্দোলনসমূহ
যুদ্ধের ভৌগোলিক ও সময়ানুক্রমিক ব্যাপ্তি
যুদ্ধটিকে প্রধানত তিনটি রণাঙ্গনে বিভক্ত করা যায় – দক্ষিণ রণাঙ্গন, উত্তর-পশ্চিম রণাঙ্গন এবং পূর্ব রণাঙ্গন। সময়ের দিক থেকেও যুদ্ধটিকে তিন ভাগে বিভক্ত করা যায়।
এদের মধ্যে প্রথম ভাগটি অক্টোবর বিপ্লব থেকে ব্রেস্ত-লিতোভস্ক যুদ্ধবিরতি পর্যন্ত বিস্তৃত। বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার দিনই কসাক জেনারেল আলেক্সেই কালেদিন নতুন সরকারকে মেনে নিতে অস্বীকার করেন এবং দন অঞ্চলের ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব স্থাপন করেন[৮]। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক সৈন্যবাহিনী জড়ো হয়। ব্রেস্ত-লিতোভস্ক চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর মিত্রশক্তিও সরাসরি রাশিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপ করে এবং বলশেভিক সরকারের বিরোধী বাহিনীগুলোকে অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ শুরু করে। বলশেভিকদের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাতের আশঙ্কায় অনেক জার্মান সেনানায়কও তাদের সাহায্য করার প্রস্তাব দেন।
এসময় বলশেভিকরা অস্থায়ী সরকার এবং শ্বেত ফৌজের কাছ থেকে মধ্য এশিয়া দখল করে নেয় এবং স্তেপ ও তুর্কিস্তানে (যেখানে প্রায় বিশ লক্ষ রুশ বসবাস করত) কমিউনিস্ট পার্টির একটি ঘাঁটি গড়ে তোলে[৯]।
যুদ্ধ
প্রাথমিক বলশেভিকবিরোধী বিদ্রোহসমূহ
১৯১৭ সালের অক্টোবরে সংঘটিত কেরেনস্কি-ক্রাস্নভ অভ্যুত্থান ছিল বলশেভিকদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার প্রথম প্রচেষ্টা। পেত্রোগ্রাদে সংঘটিত জাঙ্কার বিদ্রোহ এই অভ্যুত্থানকে সমর্থন করে। কিন্তু লাল রক্ষীরা, বিশেষত লাল লাতভীয় রাইফেলস, এই দুইটি বিদ্রোহ দমন করতে সক্ষম হয়।
কেন্দ্রীয় শক্তির সঙ্গে শান্তিচুক্তি
১৯১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাশিয়া এবং কেন্দ্রীয় শক্তির মধ্যে ব্রেস্ত-লিতোভস্কে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং শান্তি আলোচনা শুরু হয়[১০]। শান্তির বিনিময়ে কেন্দ্রীয় শক্তি প্রাক্তন রুশ সাম্রাজ্যের বিরাট এক অঞ্চল দাবি করে। এর ফলে রুশ জাতীয়তাবাদী ও রক্ষণশীলরা দারুণ বিচলিত হয়ে পড়ে। বলশেভিকদের প্রতিনিধি লিওন ত্রতস্কি এ ধরনের কোনো চুক্তি করতে অস্বীকৃতি জানান, এবং বলশেভিকরা 'যুদ্ধও নয়, শান্তিও নয়' এই নীতি অনুসরণ করে একটি একপক্ষীয় যুদ্ধবিরতি পালন করতে থাকে[১১]।
ইউক্রেন, দক্ষিণ রাশিয়া এবং ককেশাস (১৯১৮)
পূর্ব রাশিয়া, সাইবেরিয়া এবং রুশ দূরপ্রাচ্য (১৯১৮)
মধ্য এশিয়া (১৯১৮)
১৯১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে লাল ফৌজ শ্বেত রুশদের দ্বারা সমর্থিত তুর্কিস্তানের স্বায়ত্তশাসিত কোকান্দ দখল করে নেয়[১২]। এর ফলে মধ্য এশিয়ায় বলশেভিকদের ভিত মজবুত হলেও মিত্রশক্তির হস্তক্ষেপের ফলে শীঘ্রই লাল ফৌজের জন্য নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়। ১৯১৮ সালে মধ্য এশিয়ায় লাল ফৌজের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি ছিল শ্বেত ফৌজের প্রতি ব্রিটিশ সমর্থন। যুক্তরাজ্য উক্ত অঞ্চলে তিনজন উল্লেখযোগ্য সমরনায়ককে প্রেরণ করে। এঁদের একজন ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফ্রেডারিক বেইলি, যাঁকে তাসখন্দে একটি মিশনে প্রেরণ করা হয়েছিল। বলশেভিকরা তাকে সেখান থেকে বিতাড়িত করে। আরেকজন ছিলেন জেনারেল উইলফ্রেড ম্যালেসন, যিনি ম্যালেসন মিশন পরিচালনা করেন এবং একটি ক্ষুদ্র ইঙ্গ-ভারতীয় বাহিনী নিয়ে আসখাবাদে মেনশেভিকদের সহায়তা করেন। কিন্তু তিনি তাসখন্দ, বুখারা এবং খিভা দখল করতে ব্যর্থ হন। তৃতীয় জন ছিলেন মেজর জেনারেল লিওনেল ডানস্টারভিল, যিনি ১৯১৮ সালের আগস্টে মধ্য এশিয়ায় পৌঁছান এবং এর এক মাস পরেই বলশেভিকরা তাকে সেখান থেকে বিতাড়িত করে[১৩]। ১৯১৮ সালের ব্রিটিশ আক্রমণের কারণে কিছু ব্যর্থতা ঘটলেও মধ্য এশীয় জনসাধারণকে প্রভাবান্বিত করার ব্যাপারে বলশেভিকরা অগ্রসর হতে থাকে। ১৯১৮ সালের জুনে একটি আঞ্চলিক বলশেভিক দল প্রতিষ্ঠার জন্য সমর্থন লাভের উদ্দেশ্যে তাসখন্দে রুশ কমিউনিস্ট পার্টি প্রথম আঞ্চলিক কংগ্রেস আহ্বান করে[১৪]।
বামপন্থী সমাজবিপ্লবী বিদ্রোহ
এস্তোনিয়া, লাতভিয়া এবং পেত্রোগ্রাদ
১৯১৯ সালের জানুয়ারির মধ্যে এস্তোনিয়া থেকে লাল ফৌজ বিতাড়িত হয়[১৫]। ২২ মে বাল্টিক জার্মান স্বেচ্ছাসেবকরা লাল লাতভীয় রাইফেলসের কাছ থেকে রিগা দখল করে নেয়, কিন্তু এক মাস পর এস্তোনীয় ৩য় ডিভিশন বাল্টিক জার্মানদের পরাজিত করে এবং লাতভীয় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে[১৬]।
উত্তর রাশিয়া (১৯১৯)
ব্রিটিশরা মার্মানস্ক দখল করে এবং আমেরিকানদের সঙ্গে যৌথভাবে আর্খানজেলস্ক দখল করে। কিন্তু সাইবেরিয়া থেকে কোলচাকের সৈন্যবাহিনীর পশ্চাৎপসরণের পর ব্রিটিশ ও আমেরিকানরা শহরগুলো থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়, যাতে শীতকালে তারা বন্দরগুলোতে অবরুদ্ধ না হয়ে পড়ে। ইয়েভগেনি মিলারের নেতৃত্বাধীন শ্বেত ফৌজের অবশিষ্টাংশ ১৯২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই অঞ্চল ত্যাগ করে।
সাইবেরিয়া (১৯১৯)
১৯১৯ সালের মার্চের প্রথমদিকে পূর্ব রণাঙ্গনে শ্বেত ফৌজের আক্রমণ আরম্ভ হয়। ১৩ মার্চ তারা উফা পুনর্দখল করে; এপ্রিলের মাঝামাঝিতে শ্বেত ফৌজ গ্লাজভ–চিস্তোপোল–বুগুলমা–বুগুরুসলান–শার্লিক রেখা বরাবর থামে। এপ্রিলের শেষদিকে লাল ফৌজ কোলচাকের বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতি-আক্রমণ শুরু করে। মিখাইল তুখাচেভস্কির নেতৃত্বাধীন লাল ফৌজের ৫ম সৈন্যদল ২৬ মে এলাবুগা, ২ জুন সারাপুল এবং ৭ জুন ইজেভস্ক দখল করে এবং আরো সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। উভয় পক্ষই জয়-পরাজয়ের সম্মুখীন হয়, কিন্তু গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে লাল ফৌজ শ্বেত ফৌজের তুলনায় বৃহৎ হয়ে ওঠে এবং পূর্বে হারানো অঞ্চলগুলো পুনর্দখল করে নিতে সক্ষম হয়।
চেলিয়াবিনস্ক আক্রমণ পরিত্যক্ত হওয়ার পর শ্বেত ফৌজ তোবোলের পিছে পশ্চাৎপসরণ করে। ১৯১৯ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে শ্বেত ফৌজ তোবোল রণাঙ্গনে একটি আক্রমণ চালায়। কিন্তু ১৪ অক্টোবর লাল ফৌজ প্রতি-আক্রমণ চালায় এবং এর ফলে শ্বেত ফৌজের পূর্বদিকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে পশ্চাৎপসরণ আরম্ভ হয়।
১৯১৯ সালের ১৪ নভেম্বর লাল ফৌজ ওমস্ক দখল করে[১৭]। এই পরাজয়ের অল্প কিছুদিন পরেই অ্যাডমিরাল কোলচাক তার সরকারের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন; ডিসেম্বরের মধ্যে সাইবেরিয়ায় শ্বেত ফৌজ অস্তিত্ব হারায়। তিন মাসব্যাপী পশ্চাৎপসরণের পর ১৯২০ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে শ্বেত ফৌজের বেঁচে যাওয়া সদস্যরা বৈকাল হ্রদ অতিক্রম করে চিতায় পৌঁছে এবং সেমিয়োনোভের বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়।
দক্ষিণ রাশিয়া (১৯১৯)
মধ্য এশিয়া (১৯১৯)
১৯১৯ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ব্রিটেন মধ্য এশিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়[১৮]। কিন্তু লাল ফৌজের এই গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যের পরও ইউরোপীয় রাশিয়া এবং অন্যান্য অঞ্চলে শ্বেত ফৌজের আক্রমণের কারণে মস্কো ও তাসখন্দের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। কিছু সময়ের জন্য সাইবেরিয়ায় অবস্থানরত লাল ফৌজ থেকে মধ্য এশিয়া সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে[১৯]। তবে এই যোগাযোগ ব্যর্থতা লাল ফৌজকে দুর্বল করলেও বলশেভিকরা মধ্য এশিয়ায় জনসমর্থন লাভের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে এবং মার্চে দ্বিতীয় আঞ্চলিক সম্মেলনের আয়োজন করে। এই সম্মেলনের সময় রুশ বলশেভিক দলের মুসলিম সংগঠনসমূহের একটি আঞ্চলিক ব্যুরো গঠন করা হয়। মধ্য এশীয় জনগণের জন্য অধিকতর অধিকার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলশেভিকরা স্থানীয় জনগণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে এবং বছরের শেষ পর্যন্ত মধ্য এশীয় জনসাধারণের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম হয়[২০]।
১৯১৯ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে সাইবেরিয়ায় অবস্থানরত লাল ফৌজ এবং ইউরোপীয় রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটে। মধ্য এশিয়ার উত্তর সীমান্তে লাল ফৌজের সাফল্যের ফলে মস্কোর সঙ্গে যোগাযোগ পুনঃস্থাপিত হয় এবং বলশেভিকরা তুর্কিস্তানে শ্বেত ফৌজকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়[১৯]।
দক্ষিণ রাশিয়া, ইউক্রেন এবং ক্রোন্সতাদৎ (১৯২০–১৯২১)
ককেশাস (১৯২০–১৯২১)
সাইবেরিয়া এবং দূরপ্রাচ্য (১৯২০–১৯২২)
সাইবেরিয়ায় অ্যাডমিরাল কোলচাকের সৈন্যবাহিনী ভেঙে পড়ে। ওমস্ক হারানোর পর তিনি নিজেই সেনাপতিত্ব ছেড়ে দেন এবং জেনারেল গ্রিগোরি সেমিয়োনোভকে সাইবেরিয়ায় শ্বেত ফৌজের নতুন নেতা নিয়োগ করেন। এর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সৈন্যবাহিনীর সুরক্ষা ছাড়া ইর্কুতস্কের দিকে যাওয়ার পথে বৈরীভাবাপন্ন চেকোস্লোভাকদের হাতে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং তাকে ইর্কুতস্কের সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক কেন্দ্রের হাতে সোপর্দ করা হয়। ৬ দিন পর একটি বলশেভিক-কর্তৃত্বাধীন সামরিক-বিপ্লবী কমিটি ইর্কুতস্কের শাসনভার গ্রহণ করে। অঞ্চলটিতে শ্বেত ফৌজ পৌঁছানোর ঠিক আগে ৬/৭ ফেব্রুয়ারি কোলচাক এবং তার প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর পেপেলিয়ায়েভকে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং তাদের লাশ বরফ জমে যাওয়া আঙ্গারা নদীতে নিক্ষেপ করা হয়[২১]।
কোলচাকের সৈন্যবাহিনীর অবশিষ্টাংশ ট্রান্সবৈকালিয়ায় পৌঁছে সেমিয়োনোভের সৈন্যদের সঙ্গে যোগ দেয় এবং দূরপ্রাচ্য সৈন্যবাহিনী গঠন করে। জাপানি সৈন্যবাহিনীর সহায়তায় তারা চিতা নিজেদের দখলে রাখতে সক্ষম হয়, কিন্তু ট্রান্সবৈকালয়া থেকে জাপানি সৈন্য প্রত্যাহারের পর সেমিয়োনোভের পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়ে। ১৯২০ সালের নভেম্বরে লাল ফৌজ তার সৈন্যবাহিনীকে ট্রান্সবৈকালিয়া থেকে বিতাড়িত করে এবং তিনি পালিয়ে চীনে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। জাপানিদের আমুর অঞ্চল দখল করে নেয়ার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু বলশেভিক সৈন্যরা ধীরে ধীরে রুশ দূরপ্রাচ্যের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করলে জাপানিরা শেষ পর্যন্ত সাইবেরিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়। ১৯২২ সালের ২৫ অক্টোবর লাল ফৌজ ভ্লাদিভোস্তক দখল করে নেয়, এবং অস্থায়ী প্রিআমুর সরকারের বিলুপ্তি ঘটে।
ফলাফল
বিদ্রোহ চলমান
ক্ষয়ক্ষতি
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- ↑ Mawdsley, pp. 3, 230
- ↑ Последние бои на Дальнем Востоке. М., Центрполиграф, 2005.
- ↑ Krivosheev 1997, পৃ. 7।
- ↑ Mawdsley 2007, পৃ. 3, 230।
- ↑ Russian Civil War Encyclopædia Britannica Online 2012
- ↑ Mawdsley 2007, পৃ. 287।
- ↑ Calder 1976, পৃ. 166: "[...] the Russian army disintegrated after the failure of the Galician offensive in July 1917."
- ↑ Каледин, Алексей Максимович. A biography of Kaledin (in Russian)
- ↑ Wheeler 1964, পৃ. 103।
- ↑ Mawdsley 2007, পৃ. 42।
- ↑ Smith ও Tucker 2014, পৃ. 554–555।
- ↑ Rakowska-Harmstone 1970, পৃ. 19।
- ↑ Coates ও Coates 1951, পৃ. 75।
- ↑ Allworth 1967, পৃ. 232।
- ↑ Baltic War of Liberation Encyclopædia Britannica
- ↑ "Generalkommando VI Reservekorps"। Axis History।
- ↑ "Bolsheviki Grain Near Petrograd"। New York Tribune। Washington, DC। Library of Congress। ১৫ নভেম্বর ১৯১৯। পৃষ্ঠা 4। সংগ্রহের তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০১০।
- ↑ Allworth 1967, পৃ. 231।
- ↑ ক খ Coates ও Coates 1951, পৃ. 76।
- ↑ Allworth 1967, পৃ. 232–233।
- ↑ Mawdsley 2007, পৃ. 319–21।